টাকা ফেরত পেতে পারেন ডেসটিনি-যুবকের গ্রাহকরা

প্রকাশিত: ৭:১৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১

টাকা ফেরত পেতে পারেন ডেসটিনি-যুবকের গ্রাহকরা

ডেসটিনি ও যুবকের প্রতারিত গ্রাহকরা অন্তত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ টাকা ফেরত পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেছেন, ডেসটিনি ও যুবকের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় কি-না, তা ভাবা হচ্ছে। কারণ এসব কোম্পানির সম্পদের মূল্য বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ দুটি কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হবে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। আইনে সংশোধন প্রয়োজন হলে, তা করা হবে।

রোববার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রী এ কথা বলেন। ‘প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে ইআরএফের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালা শুরুর আগে প্রতিযোগিতা কমিশন অফিসে মুজিব কর্ণার উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত কর্মশালায় সংস্থার সদস্য এএফএম মনজুর কাদির, জিএম সালেহ উদ্দিন, নাসরিন বেগম, উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাফরুহা মারফি এবং ইআরএফের সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামও এতে বক্তব্য রাখেন।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ব্যবসার মাধ্যমে ডেসটিনি গ্রুপ দেশের প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের কাছ থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। ডেসটিনি তাদের গ্রাহক, পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সমবায় সমিতিতে বিনিয়োগ, গাছ লাগিয়ে ভবিষ্যতে তা বিক্রি করে মুনাফা দেওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে এ পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে। এসব টাকা দিয়ে ডেসটিনির মালিকরা নিজেদের ও প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপনা, জমি, ভবন কিনেছে। ২০১২ সালে এই কোম্পানির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সেই থেকে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন কারাগারে রয়েছেন; প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমও বন্ধ। একইভাবে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি বা যুবক-ও অবৈধ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে সরকার প্রশাসক নিয়োগ করে। এ পর্যন্ত যুবকের গ্রাহকরাও টাকা পায়নি। সম্প্রতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মানুষের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না। কয়েকটি কোম্পানির মালিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এ অবস্থায় ডেসটিনি ও যুবক প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেছে।

টিপু মুনশি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ডেসটিনি ও যুবকের সম্পদের দাম বেড়েছে। এখন কীভাবে এসব সম্পদ বিক্রি করা যায়, তা নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতা থাকলে, তা কীভাবে দূর করা যায়, তা আইনমন্ত্রী দেখবেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ৫০ বছর হয়েছে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ সময়ে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অনেক সংস্থা হয়েছে। আরও সংস্থা হবে। প্রতিযোগিতা কমিশন নতুন সংস্থা। সংস্থাটি যে খুব শক্তিশালী হয়েছে, তা নয়। প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও পায়নি। তবে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রেখে এগোচ্ছে।

ই-কমার্স প্রসঙ্গে টিপু মুনশি বলেন, আড়াই লাখ টাকার মোটরসাইকেল দেড় বা দুই লাখ টাকায় বেচাকেনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে কীভাবে পণ্য বিক্রি হতে পারে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে কথা বলতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে মন্ত্রণালয় থেকে কেনাকাটায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে কথা উঠতে পারে, মন্ত্রণালয় মানুষকে লাভ থেকে বঞ্চিত করছে।

তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্যের তুলনায় দেশে দ্রুত গতিতে ই-কমার্স প্রসারিত হয়েছে। করোনার কারণে এটি হয়েছে হয়তো। সরকার ২০২৫ সালে যে পর্যায়ে যেতে চেয়েছিল, তা এখনই অর্জন হয়েছে। গৃহবধূ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ থেকে ৩০ হাজার উদ্যোক্তা এসেছে।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও উন্নীত করার কাজ চলছে। এজন্য নতুন অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। সক্ষমতা উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে একটি প্রকল্প।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তিনটি মামলা নিষ্পত্তি করেছে কমিশন। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে ১৪টি অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস খাত নিয়েও কাজ করবে কমিশন।

সংবাদটি শেয়ার করুন