শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসকদের সাথে দুদকের বাদানুবাদ ॥ বিএমএর কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারী

প্রকাশিত: ৫:০০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২

শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসকদের সাথে দুদকের বাদানুবাদ ॥ বিএমএর কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ও চিকিৎসকদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনপ্রকার হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি দেন বিএএমএ’র সভাপতি ডা. ইসতিয়াক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহিনসহ অন্য সদস্যরা।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, দুদকের বরিশালের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা ও তার টিম মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাসুম আহমেদসহ অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। হাজিরার বিষয়ে তারা অসম্মানজনক কৈফিয়ত তলব করে। এ সময় শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ স্বাস্থ্যশিক্ষার মহাপরিচালকের অনুমতি না পাওয়ায় বায়োমেট্রিক হাজিরার তথ্য দিতে চাননি। এতে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন দুদক সদস্যরা। এ সময় মামলারও ভয় দেখানো হয়। সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ দাখিল না করে এ ধরনের ভীতিকর পরিবেশ তৈরি এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সংবাদ পরিবেশনে প্ররোচিত করা হয় বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়। স্মারকলিপিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর জন্য দায়ী দুদকের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার দুর্ব্যবহার ও অসদাচারণের তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়।

এতে আরও উল্লেখ করা হয় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএমএম বরিশাল শাখার জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

তবে মঙ্গলবার ওই অভিযানের বিষয়ে দুদকের বরিশাল কার্যালয়ের উপ-পরিচালক দেবব্রত মন্ডল জানান, সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে চিকিৎসকদের নির্ধারিত সময়ে নিজ নিজ কক্ষে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় দুদক দল কলেজ অধ্যক্ষের কাছে চিকিৎসকদের এক সপ্তাহের বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা দেখতে চান। তবে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন তা দিতে অস্বীকার করেন। তবে এ ঘটনায় কোনও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, স্মারকলিপিতে বিএমএ সদস্য এবং চিকিৎসকরা গতকালের ঘটনার বিষয়টি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেছেন। তারা দুদক কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে বিচার দাবি করেছেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয় এবং দুদকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কি ঘটেছিল মঙ্গলবার
শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখেন এ সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সোয়া ৯টার দিকে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহিনের কক্ষে গেলে তাকে পাননি দুদক টিম। এমনকি অফিসের একজন পিয়নও উপস্থিত ছিলেন না।
দুদকের টিম আসার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে কার্যালয়ে আসেন কলেজ অধ্যক্ষ। দুদক টিম কলেজ অধ্যক্ষের কাছে চিকিৎসকদের এক সপ্তাহের বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা দেখতে চান। তা দিতে অস্বীকার করেন কলেজ অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহিন। এ নিয়ে দুদকের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অভিযানকারী টিমের ছবি তুলে রাখার হুমকি দিচ্ছেন মনিরুজ্জামান শাহিন এবং কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময়ে দুদক টিম তাদের পরিচয় দিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলে নিজেদের অভিহিত করেন।
তখন কলেজ অধ্যক্ষ পালটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আপনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আর আমি (অধ্যক্ষ) কী উড়ে এসেছি নাকি! এর কিছুক্ষণ পরে কলেজের অন্যান্য চিকিৎসকরা আসতে শুরু করেন। সোয়া ১০টার দিকে চিকিৎসকরা এসে অধ্যক্ষের কক্ষে বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতে শুরু করেন। দুদক টিম চলে যাওয়ার পরে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহিন পালটা অভিযোগ করে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের টিম আমার কক্ষে এসে আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
তারা আমাকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা বলে অভিহিত করেন। আমার কক্ষে ঢুকে যে আচরণ করেছেন তা তারা করতে পারেন না। আমি জেনেছি তাদের কেউ একজন ডাক্তার দেখাতে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এজন্য তারা এসেছেন চিকিৎসকরা কখন আসেন তা দেখার জন্য।
দুদক টিম আমার কাছে বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা চান। আমি স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের (ডিজি) সঙ্গে আলাপ করেছি। তিনি বলেছেন, দুদক টিম যদি আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে না আসে, তাহলে সে হঠাৎ করে এসে কাগজ চাইতে পারে না। এগুলো দেইনি দেখে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন।
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বরিশালের সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে সব চিকিৎসকদের অবহিত করেছি। মনিরুজ্জামান শাহিন চিকিৎসকদের দেরিতে অফিসে আসার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তা ঠিক আছে।
আবার অনেক সময় চিকিৎসকরা দেরিতে এসে দায়িত্ব পালন করে ৫টার সময়েও যান। তা কিন্তু কেউ বলেন না। তবে ডাক্তাররা অতিরিক্ত দেরিতে আসলে তা কেউ মেনে নেবে না। সরকারি দায়িত্ব অবহেলা করে ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসকরা সময় দেন বেশি অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, সরকার থেকে ব্যক্তিগত চেম্বার করা যাবে না এমন কোনো নির্দেশনা আছে বলে জানা নেই। যদি থাকে তাহলে চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত চেম্বার করবেন না। তাছাড়া কতজন রোগী দেখতে পারবেন সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই

সংবাদটি শেয়ার করুন