চালু হলো ২১ বছর বন্ধ থাকা সেই সরকারি স্কুল

প্রকাশিত: ৭:১৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২৩

চালু হলো ২১ বছর বন্ধ থাকা সেই সরকারি স্কুল

শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে দীর্ঘ ২১ বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের শহীদ আফসার উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। রোববার (১ জানুয়ারি) শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেই নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোমাঞ্চ আহম্মেদ। প্রায় দুই যুগ বন্ধ স্কুলের দরজা উন্মুক্ত হওয়ায় দিনটিকে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উদযাপন করেছে এলাকাবাসী।

সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোমাঞ্চ আহম্মেদ বলেন, অন্য দুটি স্কুল থেকে ডেপুটেশনে দুজন শিক্ষক সংযুক্ত করে শহীদ আফসার উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রথম দিনে কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে তাদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বই তুলে দিয়েছি। বিদ্যালয়টিতে আরও একজন নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক যুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, বন্ধ স্কুলটি এবং শিক্ষা গ্রহণে ওই এলাকার মানুষদের দুর্ভোগের বিষয় উল্লেখ করে কিছু দিন আগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আমি চিঠি পাই। চিঠির আলোকে জরুরি ভিত্তিতে স্কুলটি চালুর উদ্যোগ নিই। স্কুল ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেই কাজও শুরু হবে।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন ডেপুটেশনে নিযুক্ত মিনারা বেগম এবং সহকারী শিক্ষক পদে আব্দুল কালাম।

বিদ্যালয় চালু হওয়ার সংবাদে রোববার ভোর থেকেই ওই এলাকায় স্থানীয়রা ভিড় জমান। এতদিনের দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়ায় কান্নাও করেন অনেকে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কত যুগ বন্ধ থাকার পর তাদের চেষ্টায় স্কুলের দরজা খুলেছে। এটি আমাদের আনন্দের দিন। আমাদের সন্তানরা এখন সহজভাবে শিক্ষার সুযোগ পাবে। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

কামাল হোসেন রাঢ়ী আরেকজন বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর আমিও এখানে লেখাপড়া করেছি। কিন্তু স্বার্থান্বেষী দুটি মহলের কারণে বন্ধ ছিল। স্কুল চালু হওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। সেই সঙ্গে যে দুটি পক্ষ স্কুলটি বন্ধ করে রেখেছিলেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক আমি এই দাবি জানাই।

ব্যবসায়ী হাসান তালুকদার বলেন, দুই পক্ষ নিজেদের স্বার্থের কারণে স্কুলটি বন্ধ করে দিয়েছিল। এই এলাকার ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে তারা। স্কুল চালু হওয়ায় আশার আলো ফুটেছে। যাদের মামলাবাজিতে সরকারি স্কুলটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাদের শাস্তির দাবি জানাই। আমাদের সন্তানদের অনেক কষ্টে লেখাপড়া করতে হয়েছে।

সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, দুই পক্ষের শিক্ষকদের বিবাদে বন্ধ থাকা স্কুলটি দ্রুত চালু করতে পেরে আমরাও আশাবাদী ওই এলাকায় শিক্ষা গ্রহণে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা দূর হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দীনের নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে আবদুল করিম হাওলাদার নামে এক ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক ও অন্য তিনজনকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন।

কিন্তু ১৯৯০ সালের পর পরিচালনা কমিটি নিয়ে এলাকায় বিভাজন সৃষ্টি হয়। ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এলজিইডি প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে। ভবন তোলার পর স্থানীয় জাফর আলী ও আবদুস ছাত্তার নামে দুই ব্যক্তি পাল্টাপাল্টি কমিটি করে আলাদা আলাদাভাবে চারজন করে মোট আটজন শিক্ষক নিয়োগ করেন। দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি নিজেদের শিক্ষক দাবি করায় সেখানে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিবাদমান দুটি পক্ষের এক পক্ষ একদিন স্কুলে আসলে অপর পক্ষ পরের দিন এসে স্কুল দখল করতেন। এই নিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পরস্পর বিরোধী দুটি মামলা হলে ২০০১ সালে স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু স্কুলটি শুরু থেকেই নিবন্ধিত ছিল, তাই ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয়। বিবাদমান দুটি পক্ষের কারণে সরকারি হওয়ার পরও স্কুলটি চালু করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে অন্য স্কুলে পড়াশুনা করতে হতো কোমলমতি শিশুদের।

সংবাদটি শেয়ার করুন