দাম না পাওয়ায় বাবুগঞ্জের টমেটো চাষিরা বিপাকে

প্রকাশিত: ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২১

দাম না পাওয়ায় বাবুগঞ্জের টমেটো চাষিরা বিপাকে

মোহাম্মদ আলী, বাবুগঞ্জঃ
সবজি উৎপাদনে ব্যাপক সুনাম অর্জনকারী উপজেলা বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় টমেটোর দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। কাঁচা টমেটো ৩ টাকা, পাকা ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দাম না পাওয়ায় এ সবজি গরুর খাবারে পরিণত হয়েছে।

এই উপজেলায় প্রতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ টমেটো উৎপাদন হয়। এবারও শুরুর দিক লাভের মুখ দেখলেও মৌসুমের এই সময়ে এসে উৎপাদন খরচ তুলতে কৃষকদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।

টমেটোর দরপতন ও বিক্রির জন্য পাইকার ব্যবসায়ী না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ উপজেলার চাষিরা। তাদের দাবি খেত থেকে টমেটো তুলে বিক্রি করার পর যে মূল্য পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে শ্রমিকদের মজুরি হচ্ছে না। নিজের পকেট থেকে মজুরি দিতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, এবার একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে টমেটো উঠেছে, তাই কারোরই লাভ হচ্ছে না। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারিভাবে হিমাগার নির্মাণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় টমেটো চাষ লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

উপজেলার কেদারপুর গ্রামের টমেটো চাষি বশির মিয়া বলেন, এবার ৪০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবারে টমেটোর ফলন ভালো। কিন্তু দাম একেবারেই নেই। গত বছরেও তাদের লোকসানে পড়তে হয়েছিল রোগবালাইয়ের জন্য। আর এবারে দাম না পেয়ে লোকসানে পড়তে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষকেরা টমেটোর আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

একই গ্রামের টমেটো চাষি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, স্থানীয় বাজারে এক মন টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। অথচ টমেটো চাষ করতে যে খরচ করা হয়েছে সে অনুযায়ী টমেটো বিক্রি করে খরচ উঠছে না। ২২ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করেছি মাত্র ৭ হাজার টাকার। ২২ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করতে খরচ হয়েছে আনুমানিক ৩৫ হাজার টাকা। খরচের টাকা উঠছে না। এখন খেত থেকে টমেটো তুলে যে টাকা পাচ্ছি তা দিয়ে শ্রমিকদের মজুরি হচ্ছে না। তাই খেত থেকে টমেটো তোলা বন্ধ করে দিয়েছি।

দাম কমের ব্যাপারে টমেটোর পাইকারি ক্রেতারা বলছেন, এখানকার মতো বরিশাল জেলা শহর সহ অন্যান্য শহরেও টমেটোর দাম কম। যার কারণে তারা ভালো ব্যবসা করতে পারছেন না। তা ছাড়া বাজারে টমেটোর আমদানি অনেক বেশি থাকায় দাম কম।

টমেটো ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ছোটন জানান, যদি ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চাহিদা থাকতো, তাহলে বাজার ভালো হতো। চাহিদা না থাকায় দাম কম। তবে দিনে দিনে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বাবুগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহ মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগের আধুনিক প্রযুক্তিতে কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও কঠোর নজর দাড়িতে বাবুগঞ্জ উপজেলায় এ বছর টমেটো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ উপজেলায় আগাম টমেটো চাষ হয়। প্রথম দিকে ভালো দাম পাওয়া যায়। এই সময় টমেটোর দাম কম থাকে। এখন সারা বাংলাদেশে টমেটো উঠতে শুরু করেছে তাই দাম কম।

সংবাদটি শেয়ার করুন