ঢাকা ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২১
সুদের তিনগুণ টাকা ও বসতি জমি লিখে নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি সুদের কারবারি কায়েশ তালুকদার। ভুক্তভোগী রাখাল ভদ্রকে নির্যাতনের পর গ্রামছাড়া করে সুদের সূত্র ধরে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাখালের স্ত্রী পূর্ণিমার ওপর। দুই শিশুসন্তানের সামনে সম্ভ্রম হারিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে ওই গৃহবধূকে।
ঘটনা আড়াল করতে নিহতের ছেলে আকাশকে দেয়া হয়েছে প্রাণনাশের হুমকি। এরই ধারাবাহিকতায় ভিকটিম পরিবারের মোটা দাগের জমিতে সীমানা প্রাচীর দিয়ে দখলের প্রস্তুতিও নিয়েছে। এত কিছুর পরও রহস্য উদঘাটনে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। বরং একটি ইউডি মামলা অন্তর্ভুক্ত করেছে পুলিশ।
নিহতের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আকাশ ভদ্র (১৫) ও পরিবার এমন রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ঘটনার পর জড়িতরা গা-ঢাকা দিলেও এখন প্রকাশ্যে দম্ভোক্তি ছুড়ছেন। পাশাপাশি ঘটনা আড়াল করতে কৌশল চালাচ্ছে জড়িতরা। গত ৯ এপ্রিল পটুয়াখালী জেলা শহরের অদূরে জৈনকাঠি ইউনিয়নের ভাগিরাবাদ গ্রামের এমন ঘটনা ঘটে।
পূর্ণিমার স্বামী রাখাল ভদ্র জানান, আর্থিক সংকটে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় দুলাল তালুকদারের ছেলে কায়েশ তালুকদারের কাছ থেকে দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা সুদে নেন তিনি। জামানত বাবদ কায়েশকে দেয়া হয় একটি অলিখিত স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক। প্রতি মাসে ৮% হারে টানা চার বছর সুদের ঘানি টেনে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেন রাখাল।
টাকা পরিশোধের পর চেক-স্ট্যাম্প ফেরত চাওয়া হলে টালবাহানা শুরু করে কায়েশ। টালবাহানার একপর্যায়ে রাখালের বাড়ি ও জমি লিখে নিতে প্রভাবিত করে কায়েশ। এতে রাখাল আপত্তি জানালে সেহাকাঠি বাজারে প্রকাশ্যে মারধর করে নীরব থাকার হুশিয়ারি দেয়। রাখালকে নানা হুমকির মুখে ফেলে খালাতো ভাই আব্দুল বাসেদের নামে ২৪ শতাংশ,বোন জামাতা রবের নামে ২১ শতাংশ এবং নিজের নামে ৬ শতাংশসহ মোট ৫১ শতাংশ জমি লিখে নেয় কায়েশ।
লিখে নেয়া ওই জমি দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে কায়েশ গং। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জৈনকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে নিয়ে রাখালকে মারধর করে গ্রাম ছাড়তে বলেন। নির্যাতনের তিন দিনের মাথায় বাড়ি ছাড়েন রাখাল। তার অবর্তমানে কায়েশ তার স্ত্রীকে নানাভাবে হয়রানি করে।
সুদের টাকার সূত্র ধরে কায়েশ গং তার স্ত্রীকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। পরিবারের দেয়া খবরে তিনি পিরোজপুর থেকে রওনা দিয়ে আসতে দেরি হয়। পটুয়াখালী পৌঁছে সদর থানার অবহিত করেন বিষয়টি। থানার এসআই শামীম বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান।
রাখালের বোন শোভা রানী বলেন, স্বামীর অবর্তমানে পূর্ণিমাকে উত্ত্যক্ত শুরু করে কায়েশ গং। যখন-তখন লোকজন নিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে হুমকি-ধমকি দিত। মোবাইল ফোনে শুরু করে যৌন নিপীড়ন প্রস্তাবসহ নানা অশ্লীল কথাবার্তা বলত। গভীর রাতে ঘরের চালায় ঢিল ছুড়ে দরজায় ধাক্কা দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করত। উত্ত্যক্ত থেকে রেহাই পেতে প্রতিরাতে পূর্ণিমা আশ্রয় নিতেন বাড়ির অন্য ঘরে।
তিনি বলেন, কায়েশ সোর্স তৈরি করে সেখানে পৌঁছে যেত। ঘটনার দিন ৮ এপ্রিল পূর্ণিমা রাতে ঘুমাতে যায় মনিকার ঘরে। মধ্যরাতে দুই বছরের শিশুকন্যা পূজার কান্না থামাতে নিজের ঘরে আসেন। এরপর দুই সন্তানকে মাঝখানে নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন পূর্ণিমা।
নিহতের ছেলে আকাশ ভদ্র বলেন, ৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঘরের পেছনে টিনের শব্দ শুনে আমাদের ঘুম ভাঙ্গে। বিছানা থেকে উঠে গলায় কাপড় পেঁচানো অবস্থায় মা মাটিয়ে পড়ে আছেন। মায়ের গলায়, কপালে রক্তাক্ত জখম, বাম হাত ও হাঁটুর নিচে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘুম ভাঙ্গার শব্দ শুনে ধারণা হয়েছে ৩-৪ লোক ঘর থেকে দ্রুত বেড় হয়েছে।
রাখালের বৃদ্ধা মা সরস্বতী রানী বলেন, শব্দ শুনে চোখ মেলে ৫-৬ জনকে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যেতে দেখি। কিন্তু অন্ধকারে কাউকে চিনতে পারিনি। জেগে দেখি পুত্রবধূ মটিতে পড়ে আছেন। পরে সবাইকে জানাই।
ময়নাতদন্তে দায়িত্বরত দুই চিকিৎসক বলেন, নিহতের কপালে রক্তাক্ত জখম, বাম বাহু এবং হাঁটুর নিচে আঘাতের চিহ্ন ছিল। যৌন নির্যাতন হয়েছে কিনা তা এ মুহূর্তে বলার সুযোগ নাই। রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
রাখালের ভাইয়ের ছেলে সুমন ভদ্র বলেন, এত কিছুর পরও কায়েশ গং আমাদের বাড়ির সামনে বিশাল দাগের জমি পিলার পুঁতে সীমানা দিয়েছে দখল নেয়ার জন্য। এর পূর্বে কায়েশ আমার বর্তমান কর্মস্থল আমতলীতে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে এসেছে।
জৈনকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম বলেন, রাখাল আমার এনজিওতে কর্মরত ছিলেন। সরল এবং বিশ্বস্ত ছিলেন। লোকমুখে এমন শুনে ঘটনাস্থলে আসি। কিন্তু ভিকটিম পরিবারের মুখে ভয়ের ছাপ দেখতে পাই। এলাকাবাসী বলছেন- ঘটনার পরপর কায়েশ এলাকায় ছিল না। ১৩ এপ্রিল বাড়িতে এসে বলে বেড়ায় এতে কী হবে দেখা যাবে?
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত কায়েশ তালুকদার বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। টাকা দিয়ে জমি কিনেছি।
লাশ উদ্ধারকারী সদর থানার এসআই শামীম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল খান মোহাম্মদ মুকিত হাসান বলেন, ভিকটিমপক্ষ পুলিশকে এভাবে অবহিত করেনি। যাই হোক, আমরা বিষয়টি নতুনভাবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। যুগান্তর
প্রকাশকঃ ডাক্তার জি.কে চক্রবর্তী।
সম্পাদকঃ কাজী মফিজুল ইসলাম।
প্রধান সম্পাদকঃ নুসরাত রসিদ।
নির্বাহী সম্পাদকঃ জাকিরুল মোমিন।
মোবাইলঃ 01711225620
মেইলঃ protidin.barisal@gmail.com
ঠিকানাঃ প্যারারা রোড, বরিশাল ৮২০০।
Design and developed by Engieer BD Network