দুষিত পানি ব্যবহারেই ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া

প্রকাশিত: ৮:০৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২১

দুষিত পানি ব্যবহারেই ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া

ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল বরিশালে এসেছে। গত সোমবার ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বরিশালে পৌঁছায়। দলটি বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে রোগীদের মল, বিভিন্ন উৎসের পানির নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতায় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করছে।
আইইডিসিআরের তিনজন রোগতত্ত্ববিদ (চিকিৎসক) ও তিনজন কারিগরি সহায়ক এই দলে আছেন। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোগতত্ত্ববিদ জাহিদুর রহমান।
ওই দল সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই এই মৌসুমে বিভাগে কমবেশি ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। কিন্তু এবার আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। মূলত এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাঁরা এসেছেন। এ জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, আক্রান্ত ব্যক্তি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছেন। একই সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের নানা বিষয় সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন।
প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য বলেন, এখনো বলার মতো কিছু হয়নি। তবে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে যা বোঝা যায়, তাতে এ অঞ্চলের মানুষের একটি নেতিবাচক প্রবণতা হলো দৈনন্দিন কাজে খালের পানি ব্যবহার করা। বিশেষ করে সকালে ভাতের সঙ্গে খালের পানি মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস আছে। এই অভ্যাস বদলাতে হবে। গৃহস্থালিসহ সব কাজে নলকূপের পানি ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিনিধিদলের সদস্য রোগতত্ত্ববিদ সুব্রত মালাকার বুধবার দুপুরে বলেন, ‘আমরা কেবল কাজ শুরু করেছি। নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো ঢাকায় পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে, ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার প্রকৃত কারণ।’
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, আইইডিসিআরের অপর একটি প্রতিনিধিদল ১ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তালিকা ধরে সমীক্ষা চালায়। এতে ৯৪ শতাংশ লোক গভীর নলকূপের পানি পান করলেও ৭১ শতাংশ মানুষ দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজে খালের পানি ব্যবহার করে। সমীক্ষাভুক্ত এলাকায় মাত্র ২০ শতাংশ বাড়িতে গভীর নলকূপ আছে। প্রতিষ্ঠানটি বরগুনার খালের পানির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবে পরীক্ষা করে খালের পানিতে মলের জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছে। ২০ জন রোগীর মল পরীক্ষায় তিনজনের মলে কলেরা ও ইকোলাই জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এর মধ্যে খাওয়ার ও গৃহস্থালিকাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে গভীর নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো, খাল–নদীর পানি ফুটিয়ে অথবা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করে ব্যবহার করা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া।
আইইডিসিআরের প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি চিঠি দিয়েছি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন