আগষ্টে খুলে দেয়া হবে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন পায়রা সেতু

প্রকাশিত: ৭:২৩ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২১

আগষ্টে খুলে দেয়া হবে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন পায়রা সেতু

জিয়া শাহীন ॥ জুনে নয় আগষ্টে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের দীর্ঘতম সৌন্দর্যম-িত ও দেশের দ্বিতীয় এক্সট্রাডোজ ক্যাবল বক্স গার্ডার পায়রা (লেবুখালী) সেতু। গতকাল সেতুটি পরিদর্শনকালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুস সবুর। মূল সেতু, এপ্রোস সড়ক, টোলঘর এর কাজ শেষ হলেও এখন চলছে বিদ্যুতের লাইন, রেলিংসহ কিছু জরুরী কাজ। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।

পায়রা সেতুর নকশাই একে দেশের অন্যতম দৃষ্টি নন্দন সেতুর তকমা দিয়েছে। গুরুত্বের দিক দিয়ে এটি বিশেষ একটি সেতু। এ সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলের সাথে পায়রা বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের সর্বশেষ সেতু। বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পায়রা নদীর উপর ‘লেবুখালী সেতু’ নির্মাণের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দার উম্মুক্ত হচ্ছে সর্বদক্ষিণের।
২০১২ সালের ৮ মে একনেক সভায় প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদন লাভ করে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা নদীর উপর পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কের পায়রা নদীর উপর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

দেশের অন্যতম পায়রা সেতুতে পদ্মা সেতু থেকেও ৫০ মিটার বড় দু’টি স্প্যান বসানো হয়েছে। নান্দনিক এক্সট্রাডোজ ক্যাবল বক্স গার্ডার ব্রিজটিতে নদীর মধ্যে মূল ব্রিজ ৬৩০ মিটার। এজন্য ২০০ মিটারের দু’টি স্প্যান ও দু’পাশে দু’টি স্প্যান ১১৫ মিটার করে । যা দেশের সবচেয়ে বড় সেতু পদ্মা সেতু ব্রিজের স্প্যানের থেকেও বড়।

চার লেন বিশিষ্ট এক হাজার ৪৭০ মিটার (চার হাজার ৮২০ ফুট) দৈর্ঘ্যের ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার (৬৪ দশমিক ৮ ফুট) প্রস্থের এক্সট্রা বক্স গার্ডার ব্রিজটির উভয় দিকে সাত কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে অ্যাপ্রোচ সড়ক। ব্রিজটির প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় এক হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।

এছাড়া সেতুটি নদীর জলতল থেকে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু । ফলে নদীতে নৌযান চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে না। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোকিত হবে সেতুটি। যার কাজ এখন চলছে। চার লেন বিশিষ্ট এ সেতুটি এখন দক্ষিনাঞ্চলে অন্যতম বৃহৎ সেতু।

কুয়েত সরকারের অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে চায়নার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান চাইনিজ কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ করছে। এই মাস অথ্যাৎ জুনে উদ্বোধনের কথা থাকলেও এটি আগষ্টের মধ্যে এটি খুলে দেয়া হবে বলে জানান সওজের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো আব্দুস সবুর। গতকাল সেতু পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, জুন মানেই এটি উদ্বোধনের কথা। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে সেতুর ডিজাইন পরিবর্তন করতে হয়েছে। এ ছাড়া করোনা মহামারি, আগে আম্ফান ঝড়, এবং সম্পতিক ইয়াস ঘুর্নিঝড়ের কারণে কাজ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। এখন চলছে সৌন্দয্যবর্ধনের কাজ।

পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল খালেক বলেন, মূল কাজ শেষ। এপ্রোস সড়ক ও টোলঘরও নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। বৈদ্যুতিক কাজসহ খুটিনাটি কিছু কাজ বাকি রয়েছে। যা এ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। মূলত ব্রিজের ফাউন্ডেশন ও পানির গতিপথ পরিবর্তনের কারণেই কাজ বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। এছাড়া ব্রিজের ডিজাইনও পরিবর্তন হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল জানান, নৌপথ সচল রাখার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার কথা বিবেচনা করে পায়রা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে। এটি নির্মাণ করা হয়েছে চট্টগ্রামের তৃতীয় কর্নফুলী সেতুর আদলে নান্দনিক নকশায়। পায়রা সেতু বরিশালের সব চেয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত, আকর্ষণীয় বলে তিনি জানান।

গতকাল সরে জমিনে সেতুটি পরিদর্শনকালে এর অপুর্ব নির্মাণশৈলি দেখে অনেকেই অভিভূত হয়ে পড়েন। ৯৮ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কে এর আগে চারটি ব্রীজ নির্মিত হয়। এটি সর্বশেষ। সেতুটি খুলে দেয়া হলে বরিশাল থেকে পায়রা বা কুয়াকাটায় কোন ফেরি থাকছে না। যোগযোগের সময়সীমাও কমে আসবে। চারলেনের এ বীজ দিয়ে চলবে বিশাল পন্যবাহি লড়ি, ট্রাক। ব্যবসা বানিজ্যের নতুন দ্বার উন্মুক্তহবে।
বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজি মিরাজ মাহমুদ জানান, এ সেতুটি নিয়ে দক্ষিনাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন ছিল দীর্ঘদিনের। এখন যা পূরণের দ্বারপ্রান্তে। যোগাযোগ মাধ্যমে এটি একটি মাইল ফলক। আগে কুয়কাটা যেতে ৫টি ফেরি পার হতে হত। সময় লাগত ৭/৮ ঘন্টা। বর্তমান সরকার একে একে ৫টি সেতু নির্মান করায় এখন সময় কমে যাবে ৫ ঘন্টা। মাত্র তিনঘন্টায় যাওয়া যাবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। পায়রা বন্দর থেকে পন্যবাহি যানগুলো আসা যাওয়া করবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন