বরগুনায় সুদ দিতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা!

প্রকাশিত: ৮:২১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২০

বরগুনায় সুদ দিতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা!

জহিরুল ইসলাম, বরগুনা প্রতিনিধিঃ
সাড়ে ৭ লক্ষ টাকায় ৫বছরে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা দিলেও নিস্তার মেলেনি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের নলী বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী বেল্লাল হোসেন পলাশের। সূদ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সূদ ব্যবসায়ীর অপমানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বেল্লাল হোসেন পলাশ (৩৭)। শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাসার পেছনে থাকা মেহগনি গাছে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
বেল্লাল হোসেন পলাশ একই উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া গ্রামের মৃত শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে। তিনি নলী বাজারে কাপড়ের ব্যবসার সুবাদে সপরিবারে সেখানে বসবাস করতেন।
এলাকাবাসী জানায়, ২০১৫ সালে বরগুনা জেলা গ্রাম ডাক্তার সমিতির সভাপতি পল্লী চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম সৌরভের কাছ থেকে স্বাক্ষরসম্বলিত ব্ল্যাংক চেক ও ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প বন্ধক রেখে প্রথমে তিনলাখ টাকা সূদে নেন বেল্লাল হোসেন পলাশ। এরপর পর্যায়ক্রমে এভাবে তিনি ওই সুদ ব্যবসায়ী চিকিৎসকের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা সুদে নেন। তিনি ওই টাকার সূদ বাবদ ১১ লাখ ৫০হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন।
গত বুধবার সুদ ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম সৌরভকে আসল টাকার কিস্তি পরিশোধের কথা ছিল। কিন্ত পলাশ টাকা পরিশোধ না করায় সৌরভ বৃহষ্পতিবার পলাশকে অকথ্য গালিগালাজ করেন। এরপর শনিবার ভোরে আবারও সৌরভ মুঠোফোনে টাকার জন্য পলাশকে গালিগালাজ করলে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পলাশের মরদেহ উদ্ধার করে। এসময় মৃত পলাশের জামার পকেট থেকে ’ আমার মৃত্যুর কারণ’ শিরোনাম সম্বলিত একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। চিরকুটে তিনি উল্লেখ করেন, ’আমার স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী সকলের সাথেই সুসসম্পর্ ছিল। ডাঃ সৌরভ আমার কাছ থেকে সারে এগারো লাখ টাকা নিয়েছেন। গতমাসের কিস্তি বাবদ ২২হাজার ২শ’ টাকা আজকে দেয়ার কথা ছিল। এত টাকা পরিশোধ করা সম্ভব নয়।’ সূদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায়া অপমানে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন মর্মে লিখে রাখেন।তিনি তার আত্মহত্যার জন্য ডাক্তর সৌরভকেই দায়ী করেছেন। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তি জানান, ডাক্তার সৌরভ অনেক রৈাকের কাছেই ব্ল্যাংক চেক ও ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প বন্ধক রেখে দীর্দিন যাবৎ এ অবৈধ সুদের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন্।তিনি সুদ আদায়ের জন্য হুমকিধমকিসহ নানামুখী অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করতেন।
মৃত পলাশের স্ত্রী রোখসানা আক্তার বলেন, ডাক্তার সৌরভ সুদের টাকার জন্য খুব প্রেসারে রাখতেন। সাড়ে সাত লাখ টাকায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করেও আমরা নিস্তার পাইনি। আমার স্বামী আত্মহত্যা করার পরও ফোন দিয়ে টাকা দাবী করেন।’ ডাক্তার সৌরভের কারণে তার স্বামী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন দাবী করে বলেন, ’আমরা ডাক্তার সৌরভের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগপত্র দাখিল করবো।’
এব্যাপারে ’ডাক্তার’ জহিরুল ইসলাম সৌরভের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। বরগুনা শহরস্ত ফামের্সী পট্টিতে তার চেম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
বরগুনার থানার ওসি (তদন্ত) শহীদুল ইসলাম বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে আমরা মামলা নেব।

সংবাদটি শেয়ার করুন