বরিশাল বিএনপির বিভাজন প্রকাশ্যে

প্রকাশিত: ৭:২২ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২২

বরিশাল বিএনপির বিভাজন প্রকাশ্যে

বেশ কিছুদিন যাবৎ দলের কোন সভা সমাবেশে মজিবুর রহমান সোরয়াকে দেখা যায়নি। কমিটি থেকে বাদ যাবার পর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। হঠাৎই শুক্রবার বিকালে শ্রমিক দল নেতা বশিরের মৃত্যুবার্ষিকীতে কাকে দেখা যায়। এ সময় তার নেতৃত্বে একটি ঝটিকা মিছিলও হয়। তবে মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান এবং মিছিলে বিএনপির বর্তমান কমটিরি কোন নেতাকে দেখা যায়নি। মূল ধারার বর্তমান নেতাদের দাবি দলকে বিভক্ত করার জন্য দাদের বাদ দিয়ে এ ধরনের কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
বরিশাল মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। কমিটিতে মনিরুজ্জামান খান ওরফে ফারুককে আহ্বায়ক, আলী হায়দার ওরফে বাবুলকে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্যসচিব করা হয়। দীর্ঘদিন মহানগর কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন মজিবর রহমান সরোয়ার। এরপর গত ২২ জানুয়ারি ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়। সেখানে আগের কমিটির ১৭১ সদস্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা স্থান পাননি।
গত ৩ নভেম্বর নগর, উত্তর ও দক্ষিণের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদনের পর মজিবর রহমান সরোয়ারকে বরিশালে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এমনকি ১ ও ২ মার্চ মহানগর ও জেলা কমিটি আয়োজিত সমাবেশে কেন্দ্রীয় দুই নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রধান অতিথি থাকলেও তিনি ছিলেন না। তবে শুক্রবার শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি বশির আহমেদের ২য় মৃত্যুবার্ষিকীতে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং তার নেতৃত্বে ঝটিকা মিছিল করায় বিএনপির দ্বিধা বিভক্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মজিবর রহমান সরোয়ার ৩০ বছর ধরে নগর বিএনপির সভাপতি পদে ছিলেন। সাংসদ, হুইপ ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে তাঁর শক্ত প্রভাব রয়েছে। তিনি এবং তার সাথে বাদ পড়া নেতারা হঠাৎ মাঠে নামায় নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
একটি সূত্র জানায়, গত ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি রাতে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন বাদ পড়া নেতারা। নগরের প্যারারা রোডে নগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হকের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ওই বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর নগর বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের আভাস হিসেবে দেখছিলেন দলটির অনেক নেতা।
বঞ্চিত নেতাদের একটি সূত্র বলছে, মজিবর রহমান সরোয়ার গতকাল দোয়া মাহফিলের যে আয়োজনে যোগ দেন, সেখানে ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সৈয়দ আহসান কবির, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মহসিন মন্টু, আইনজীবী নেতা মো. শহিদ হোসেন, নগর কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ আকবর, সহসাধারণ সম্পাদক আনায়ারুল হকসহ অনেকে। পরে সরোয়ারকে নিয়ে তাঁরা মিছিল করেন এবং পদ্মাবতী রোডে জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি খাজা ইকবালকে দেখতে যান।
বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক মিডিয়াকে বলেন, ‘মজিবর রহমান সরোয়ার দলের প্রয়াত এক নেতার দোয়া মাহফিলে যোগ দিয়েছেন। সেখানে দলের অনেক নেতা-কর্মী ছিলেন। পরে আমরা একটি ঝটিকা মিছিল করেছি।’ নতুন আহবায়ক কমিটি নিয়ে সবার মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আহ্বায়ক, দুজন যুগ্ম আহ্বায়ক নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু অন্যদের নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাঁদের ঘুম থেকে তুলে ঘর থেকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। এটি দলের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।’
নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান অবশ্য বিষয়টিকে সেভাবে দেখতে চান না। তিনি বলেন, ‘বশির আহম্মেদ আমাদের দলীয় নেতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে অনুষ্ঠান হয়েছে। তবে এখানে আমাদের দাওয়াত বা ডাকা হয়নি। তা ছাড়া এর আগের মৃত্যুবার্ষিকীতে এমন অনুষ্ঠান কেন করা হয়নি, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।’ এটা দলের মধ্যে বিভাজনের ইঙ্গিত কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টিকে এভাবে বলতে বা দেখতে চাই না। তিনি আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা। এখানে দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সেটি আমাদের সবাইকে নিয়ে করলে আরও সুন্দর হতো।’
এ প্রসঙ্গে মজিবর রহমান সরোয়ার শনিবার দুপুরে বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল শ্রমিক দল। তারা কাকে দাওয়াত দিয়েছে বা দেয়নি, সেটা আমি জানি না। তবে সদ্য ঘোষিত নগর কমিটিতে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে দলের পরীক্ষিত নেতাদের কোনো বোঝাপড়া নেই। আমি বলব, এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি যাঁদের দিয়ে এই কমিটি দিল; তাঁদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া, যাঁরা বরিশালে দীর্ঘদিন শ্রম দিয়ে দলকে শক্তিশালী করেছেন, তাঁদের বাদ দেওয়া, এটা একটি বাজে নজির স্থাপন হয়েছে। এটা কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়হীনতার কারণে হয়েছে।’ এতে দলে বিভাজন স্পষ্ট হলো কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো এখানে আর ফিরব না। তবে যাঁরা দলকে এত বছর বয়ে এনেছেন, তাঁদের বাইরে রেখে দিলে তো ক্ষোভ থেকেই যাবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন