দৈনিক অর্ধলাখ টাকা চাদা / বাসষ্টান্ড দখল নিতে মন্ত্রী – মেয়রের সমর্থকরা মুখোমুখি

প্রকাশিত: ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০২২

দৈনিক অর্ধলাখ টাকা চাদা / বাসষ্টান্ড দখল নিতে মন্ত্রী – মেয়রের সমর্থকরা মুখোমুখি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে ॥ দৈনিক আদায় হয় প্রায় অর্ধলাখ টাকা চাদা। মাসে ১৫ লাখ। বছরে কয়েক কোটি। এ চাদার কারণে বরিশাল নথুল্লাবাদ বাসষ্টান্ড দখলে দুটি পক্ষ রক্তক্ষয়ি সংঘষে লিপ্ত হয়েছে। মেয়ার সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহপন্থি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম পন্থিরা রূপাতলী বাসস্টান্ডের দখল নিতে এখন মুখোমুখি অবস্থানে। গত এক সপ্তাহ যাবত একাধিকবার এই দুই গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। গতকাল রোববারও সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬জন আহত হয়েছে। ভেঙ্গে চুরমার করা হয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস। গুড়িয়ে দেয়া হয় মন্ত্রীর ছবিও।

রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিকদের দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এই দুই পক্ষের একটি বরিশাল সদর আসনের এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের এবং অপর পক্ষটি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

গত ১৫ মার্চ থেকে দু’পক্ষই প্রতিদিন টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে মহড়া দিতে থাকে। এজন্য টার্মিনালে বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করা হয়। প্রথমে দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন করলেও, পরে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা মেয়র অনুসারীদের কমিটিকে অবৈধ এবং নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা করেন।
কিন্তু মামলার পরও দখল নিতে মরিয়া শ্রমিকদের একটি পক্ষ। এ নিয়ে প্রতিদিনই উদ্দেজনা চলছে বাসষ্টান্ডে।

গতকাল মেয়রটন্থি শ্রমিকরা সংগঠিত হয়ে হামলা চালায় মন্ত্রিপন্থি গ্রুপের উপর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত কয়েকদিন যাবত হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ হামলা বন্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গতকাল শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি হামলায় অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। গতকালের হামলায় আহতরা হলেন বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহামুদ, শ্রমিক মো. মানিক, মো. শামীম, মো. নাসির। তারা সবাই পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অনুসারী। আহত অন্যরা হলেন মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাসের সমর্থক মো. কালাম ও দিপু সিকদার। এরা মেয়রপর্থি হিসাবে চিহ্নিত।
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এনামুল হক বলেন, ‘এখানে একটি অফিস ভাঙচুর অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। যারাই এই অপরাধ করেছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করে দেখব আমরা।’

মন্ত্রী সমর্থক শ্রমিক নেতা সুলতান মাহামুদ বলেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত অফিসে বসা ছিলাম। হঠাৎ করে কথিত শ্রমিক নেতা রইজ আহম্মেদ মান্না, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ, মুনিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিবসহ দুইশতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী শর্টগান ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা করে।
‘এতে আমিসহ কয়েকজন শ্রমিক আহত হই। তারা সব মেয়র সাদিকের কথায় আমার ওপর হামলা চালিয়েছে।’

তিনি দাবি করেন বলেন, ‘সাদিক আব্দুল্লাহ রূপাতলী বাস টার্মিনাল কন্ট্রোলে নিতে পারছে না আমার কারণে। এ জন্য আমার ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। আমার অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখেছে। কালকে সাদিক আমাকে নিতে লোক পাঠিয়েছিল, আমি যাইনি। আমি জাহিদ ফারুকের লোক বলে সাদিক এই হামলা করিয়েছে।’ভেঙ্ড়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস।
সুলতান বলেন, ‘আমি এবং আমার অনুসারীরা কেউ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার সাহস পাচ্ছি না, যে কারণে আমার নিজ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছি। হাসপাতালে ভর্তি হলে আমাদের ওপর আবার হামলা করা হবে।’

সিটি মেয়রের অনুসারী বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা কারও ওপর হামলা করিনি। যাদের নাম বলছেন তারা তো টার্মিনালেই আসেনি। বরং সুলতান মাহামুদ আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আমাদের দুই শ্রমিককে আহত করেছে। তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।’

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার শারমিন সুলতানা রাখি বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে।’
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এনামুল হক বলেন, ‘এখানে একটি অফিস ভাঙচুর অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। যারাই এই অপরাধ করেছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করে দেখব আমরা। পুলিশের সামনে এই ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ ছিল তবে ঘটনাস্থলে নয়, তা ছাড়া পুলিশের কোনো গাফলতি নেই।’

সংবাদটি শেয়ার করুন