‘বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা অস্বাভাবিক নয়’

প্রকাশিত: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৩

‘বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা অস্বাভাবিক নয়’

দিল্লিতে গত শুক্রবার পররাষ্ট্র-প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত। বৈঠক থেকে জানানো হয়েছে, বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে ‘স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের লক্ষ্যকে’ ভারত সমর্থন করে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার (ডিসেম্বর ২০০৩-নভেম্বর ২০০৬) বীণা সিক্রি একটি জাতীয় দৈনিকের সাথে খোলামেলা কথা বলেছেন।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র-প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ কীভাবে এসেছে জানাতে গিয়ে বীণা সিক্রি বলেন, ‘সব সময়ে আমাদের যে কোনো আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু আসে। আঞ্চলিক পরিস্থিতি যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপালসহ যেসব জায়গায় স্বার্থ রয়েছে সেগুলো আলোচনা হয়। আমি নিশ্চিত এবারও আঞ্চলিক ইস্যু আলোচিত হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অবস্থান স্পষ্ট করা অস্বাভাবিক নয় জানিয়ে বীণা সিক্রি বলেন, বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এটি খুবই স্বাভাবিক। এখানে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মূল্যায়ন জানতে আগ্রহী। সুতরাং বাংলাদেশ নিয়ে ভারত তার মূল্যায়ন জানিয়েছে।
নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে বীণা সিক্রি বলেন, বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যতের সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ভারত কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে বিশ^াসী নয়। এটি আমরা সব সময় বলে আসছি। ভারতে আমাদের যখন নির্বাচন হয়, আমরাও অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপ চাই না। কারণ ভারতে নির্বাচনের নিজস্ব প্রক্রিয়া আছে।
নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিয়ে ভারতের কিছু বলার নেই জানিয়ে বীণা সিক্রি বলেন, তারা অন্য অনেক দেশের বিরুদ্ধেও এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা শুধু তাদের কাছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখা করতে পারি। আমরা চীন ইস্যুতেও খোলামেলাভাবে বলেছি। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, চীন বাংলাদেশে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যেটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু নির্বাচন যখন উদ্বেগের বিষয়, আমরা বলেছি, সেটি বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে। যে কোনো গণতন্ত্রে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ভালো দিক। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচনে অংশ নেবে নাকি নেবে না। অন্য কেউ এ বিষয়ে বলতে পারে না।
বীণা সিক্রি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, সেটি তাদের সিদ্ধান্ত। তারা নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দোষারোপ করতে পারে না। তারা শুধু বলতে পারে, আমরা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আবারও বলব, নির্বাচন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ইস্যু। তাদের জনগণই ঠিক করবে তাদের সরকার।
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বীণা সিক্রি বলেন, কিন্তু প্রতিবাদ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতাহীন হতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন প্রতিবাদ সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন সমাজের শান্তি বিনষ্ট হয়, অস্থিরতা তৈরি হয়। পুলিশ মারা যাচ্ছে, যুবক মারা যাচ্ছে, গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে। সহিংসতা ভালো দিক না। শান্তিপূর্ণ যে কোনো প্রতিবাদই গণতন্ত্রে সিদ্ধ।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুটি আগেই নিষ্পত্তি হয়েছে জানিয়ে বীণা সিক্রি বলেন, ‘বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টে বিষয়টি গেছে। সংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকতে পারে না বলে মত দেওয়া হয়েছে। আমি বুঝতে পারি না সর্বশেষ নির্বাচনের ৫ বছর পর আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি সামনে নিয়ে এসেছে বিএনপি। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট বিষয়টি আগেই নিষ্পত্তি করেছে। বিএনপিকে ভাবতে হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন