ঢাকা ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:১৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২২
ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনে যুক্ত করার নিন্দা করেছে জাতিসংঘ। এ নিয়ে সাধারণ পরিষদে রেকর্ড সংখ্যক ভোটে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশসহ ১৪৩টি দেশ ওই প্রস্তাবের পক্ষে আর রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। ইউক্রেনে আক্রমণের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত কোনো নিন্দাসূচক প্রস্তাবে এই প্রথম ভোট দিলো বাংলাদেশ। তবে বরাবরের মতো ভারত ও চীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর বৈশ্বিক আয়োজন থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছে, দেশ দুটিসহ মোট ৩৫টি সদস্য ভোটদানে বিরত ছিল। রাশিয়াসহ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া ও নিকারাগুয়া। ভোটদানে অনুপস্থিত ছিল মস্কো মিত্র ইরানসহ ১০টি দেশ। সম্প্রতি ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, খোরাসন, লুহানস্ক ও জাপোরিঝঝিয়াতে গণভোটের মধ্য দিয়ে এগুলোকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে মস্কো। এ গণভোট ও অন্তর্ভুক্তিকরণকে অবৈধ উল্লেখ করে আলবেনিয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবটি আনে। যাতে পূর্ণ সমর্থন ছিল পশ্চিমা বিশ্বের।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে রুশ ফেডারেশনে যুক্ত করা ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে স্বীকৃতি না দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সেই ঘোষণা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। তাছাড়া ওই প্রস্তাবে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানানো হয়।
বাংলাদেশের অবস্থান বদল, যা বলেছে ঢাকা:
দুদিন আগেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ। ওই রেজুলেশনের ওপর ভোটাভুটির প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিতর্ক এবং ভোটে ভারতসহ অনেক দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ। সোমবারের ভোটাভুটিতে জাতিসংঘের ১০৭টি সদস্য রাষ্ট্র মস্কোর দাবির বিরুদ্ধে রায় দিলেও নির্মোহ ওই প্রস্তাবেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়ার ঝুঁকি নেয়নি ঢাকা। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে (বুধবার নিউ ইয়র্ক সময় বিকেলে) পাস হওয়া মূল প্রস্তাবেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ওই পলিটিক্যাল রেজুলেশনে ইয়েস ভোট দিলো বাংলাদেশ। ঢাকার এই অবস্থান বদলকে রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন পেশাদাররা। অবশ্য কেউ এখানে নাটকীয়কতা দেখছেন, কেউ কেউ পশ্চিমা চাপের কাছে নতি স্বীকার বলে সামলোচনা করছেন। স্মরণ করা যায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিতে মার্কিন প্রশাসনের জোর তদবির ছাড়াও বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি ফোন করে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিলেন। বাংলাদেশ কেন শেষ পর্যন্ত ইয়েস ভোট দিয়েছে তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম এ মুহিত, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে শেয়ার করেছে। ভাষ্যটি এমন- “ইউক্রেনের টেরিটোরিয়াল ইন্টিগ্রিটি: ডিফেন্ডিং দ্য প্রিন্সিপলস অব দ্য ইউএন সনদ’ শীর্ষক প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। আমরা তা করেছি কারণ আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক সমস্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য এবং নীতিগুলি অবশ্যই সকলের জন্য সার্বজনীনভাবে মেনে চলতে হবে, সর্বত্র, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই। আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে যেকোনো দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা উচিত। এই প্রসঙ্গে, আমরা বিশেষভাবে ইসরায়েল দ্বারা ফিলিস্তিন এবং অন্যান্য আরব ভূমি দখলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনুরূপ অভিন্ন অবস্থান নেয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছি। ইউক্রেনের সংঘাতের ধারাবাহিকতা এবং এর বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি যুদ্ধ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরিতা কোনো জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। সংলাপ, আলোচনা এবং মধ্যস্থতাই সংকট ও বিরোধ নিরসনের সর্বোত্তম উপায়। বহুপাক্ষিকতাবাদে দৃঢ় বিশ্বাসী হিসেবে, আমরা জাতিসংঘ এবং সেক্রেটারি জেনারেলের অফিসের পাশে দাঁড়াবো এবং আমাদের সাধ্যমতো তাদের সমর্থন করব। আমরা আহ্বান জানাই যে, সর্বস্তরের জনগণের আস্থা ও আস্থা অর্জনের জন্য জাতিসংঘ এবং সেক্রেটারি জেনারেলের অফিসকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে এবং সবার প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে। তাই বাংলাদেশ, বিরোধের সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার জন্য আহ্বান জানায়। মানবজাতির মঙ্গলের জন্য যুদ্ধের অবসান এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্য আমাদের সকলের কাজ করা উচিত। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে, শান্তি ও উন্নয়নের জন্য আমাদের (জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের) একসাথে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।”
প্রকাশকঃ ডাক্তার জি.কে চক্রবর্তী।
সম্পাদকঃ কাজী মফিজুল ইসলাম।
প্রধান সম্পাদকঃ নুসরাত রসিদ।
নির্বাহী সম্পাদকঃ জাকিরুল মোমিন।
মোবাইলঃ 01711225620
মেইলঃ protidin.barisal@gmail.com
ঠিকানাঃ প্যারারা রোড, বরিশাল ৮২০০।
Design and developed by Engieer BD Network