ঢাকা ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২১
দেশের বৃহত্তম পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় উৎপাদিত বিদ্যুতের অর্ধেক ব্যবহার করতে পারছেনা তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যদি ওই সঞ্চালন লাইন চালু না হয় তবে লোকসান গোনার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। অর্থাৎ এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র। পদ্মানদীর উত্তরপাড়ের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় ইতিমধ্যে এখান থেকে উৎপাদিত ৬২২ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ শুধুমাত্র দক্ষিণবঙ্গের জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ হচ্ছে।
জানতে চাইলে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ত) মো. রেজওয়ান ইকবাল খান জানান, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে এখান থেকে উৎপাদিত ৬২২ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে দক্ষিণবঙ্গের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এর আগে গোপালগঞ্জ থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ১৬০কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে চালু করা হয়। কিন্তু গোপালগঞ্জের গ্রিড থেকে ঢাকার আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ওই লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি জানান, পদ্মায় রিভার ক্লোসিং লাইন নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সেটি কমপ্লিট হলেই খুব দ্রুত সময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যদি গোপালগঞ্জ টু ঢাকার আমিন বাজারের সঞ্চালন লাইন চালু না হয় সেক্ষেত্রে সরকারকে লোকসান গুনতে হতে পারে বলে আশংকা করছে কর্তৃপক্ষ। তবে একটি ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ আর ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত লোন (কিস্তি) পরিশোধ করতে কোন সমস্যা নাই বলেও জানান রেজওয়ান ইকবাল খান।
তিনি আরও জানান, বেইজলোড পাওয়ার প্লান্ট হওয়ায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ না করতে পারলেও অর্থাৎ প্লান্ট বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি প্রেমেন্ট দিচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সেই হিসাবে একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ বাণিজ্যকভাবে সরবরাহ করে এবং ক্যাপাসিটি প্রেমেন্ট এই দুই মিলে বিদেশি লোনের কিস্তি শোধ করা সম্ভব।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখানকার দেশি-বিদেশি কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা দিনরাত সমানতলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে নির্দিষ্ট সময় উৎপাদন সক্ষম হতে পেরে উচ্ছ্বসিত এখানকার কর্মকর্তারা। কয়লাবাহী জাহাজ জেটিতে ভেড়ার পর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কয়লা লোড আনলোড হলেও ধাপে ধাপে তা মনিটিরং করছেন দেশি-বিদেশি শ্রমিকরা। আবার সর্বোচ্চ চিমনি দিয়ে কয়লা পোড়ানোর পর যে ধোঁয়া বের হয় সে বিষয়ে তদারকিতে ব্যস্ত আছেন বেশ কয়েকজন। পানি শোধনাগারে দেখভাল করছেন পর্যায়ক্রমে শ্রমিক ও কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, এখানে প্রতিদিন প্রায় ২৯ কোটি ৬লাখ লিটার পানি প্রয়োজন হয়। যার ৯৫ভাগ দ্বিতীয়বার শোধন করে কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়। কথা হয় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী সাইম রহমানের সাথে।
তিনি জানান, বিদেশি শ্রমিকসহ কর্মকর্তারা বাংলাদেশিদের সাথে আন্তরিকতার সহিত কাজ করছেন।
পায়রা ১৩২০ মেঘাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খোরসেদুল আলম জানান, কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন দরকার হচ্ছে ১৩হাজার টন কয়লা। যা ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি বন্দরের নিজস্ব টার্মিনালে ভিড়ছে। কয়লা ব্যবহারে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আছে শ্রমিকদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
তিনি জানান, কয়লাবাহী জাহাজ সরাসরি টার্মিনালে ভিড়ানোর পর ওই জাহাজ থেকেই সরাসরি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কনভেয়ারের মাধ্যমে কোল্ডডোরে পৌঁছে যাচ্ছে। সেখানেই মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব প্রসেসিং। যে কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের কোন সুযোগ নাই এখানে।
তবে স্থানীয়রাও এখন অবধি এখানকার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পায়নি বলে জানান।
কথা হয় ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ তালুকদারের সাথে। তিনি জানান, যে রকম আশংকা ছিল সেরকম কিছুই না। স্থানীয়দের ধারণা ছিল বিদ্যুতের ধোঁয়ায় গোটা এলাকা আচ্ছন্ন হবে কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছেনা। তাছাড়া গত এক বছরে এখানকার কোন গাছপালার পাতার বর্ণ পর্যন্ত রদবদল হয়নি।
আন্ধারমানিক নদীর তীরে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই নদীটি ইলিশের অভয়াশ্রম হিসাবে চিহ্নিত। কিন্তু গত একবছরে এই নদীতেও তাপবিদ্যুতের কোন প্রভাব এখন পর্যন্ত কোন জেলের নজরে আসেনি। ইত্তেফাক
প্রকাশকঃ ডাক্তার জি.কে চক্রবর্তী।
সম্পাদকঃ কাজী মফিজুল ইসলাম।
প্রধান সম্পাদকঃ নুসরাত রসিদ।
নির্বাহী সম্পাদকঃ জাকিরুল মোমিন।
মোবাইলঃ 01711225620
মেইলঃ protidin.barisal@gmail.com
ঠিকানাঃ প্যারারা রোড, বরিশাল ৮২০০।
Design and developed by Engieer BD Network