বরগুনায় পানিবন্দি লক্ষাধিক পরিবার

প্রকাশিত: ৭:০৬ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২১

বরগুনায় পানিবন্দি লক্ষাধিক পরিবার

পূর্ণিমা ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট উঁচু জোয়ারে বরগুনার লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্বল্প উচ্চতা ও ভাঙা বেড়িবাঁধই এ দুর্ভোগের কারণ বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে উপকূলের নিম্ন অঞ্চলে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে চলছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের বাহিরে বসতি গড়ে তোলা ভূমিহীনদের বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপকূলীয় নদ-নদীতে জোয়ার শুরু হয়। যা চলে একটানা রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত। এ সময় বরগুনার নদ-নদীতে পানির উচ্চতা হয় ৩.৫৮ মিটার। যা বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এতে বরগুনার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢালভাঙা এলাকায় দেখা যায়, স্বল্প উচ্চতার বাঁধের কারণে এ এলাকার অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদের ঘর অন্তত চার ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে হাঁস-মুরগিসহ পুকুর ও মাছের ঘের। এলাকাবাসী উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
ফুলঝুড়ি গ্রামের আলামিন হোসেন বলেন, আমাদের এখানের বাঁধ অনেক নিচু। এ বাঁধ উঁচু করার জন্য গত পাঁচ বছর ধরে মেম্বার-চেয়ারম্যানের পা ধরা বাদে বাকি সব কিছু করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। গত পাঁচ বছরে এই বাঁধের উপর এক ইঞ্চি মাটি কেউ দেয়নি।
সদর উপজেলার পায়রা নদীর তীরবর্তী আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের বাঁধ মঙ্গলবার সকালের জোয়ারেই ভেঙ্গে গেছে। পরে রাতে জোয়ারে বাঁধের সেই ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে অন্তত সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।
এদিকে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নে ছোট লবনগোলা, ঢুলুয়া ইউনিয়নের নলী, নলটোনা ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া এলাকায়ও লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী পদ্মা এলাকার বাঁধ অনেক আগ থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। মঙ্গলবার সকাল ও রাতের জোয়ারে সে বাঁধ পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। এতে ওই এলাকার চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত আট হাজার পরিবার।
বামনা উপজেলার চেচাঁন ও পুরাতন বামনা গ্রামে বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসরত শতাধিক লোকের বসত ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার খোলপটুয়া বাজার ও জাফরাখালী আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় বেড়িবাধ ভেঙে তলিয়ে গেছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বরগুনা জেলায় ২২টি পোল্ডারে মোট ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এরমধ্যে যেকোনো সময় ধসে যেতে পারে এমন বেড়িবাঁধের পরিমাণ ২৯ কিলোমিটার। এছাড়াও জেলায় ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে যা অপেক্ষাকৃত নিচু। বিভিন্ন এলাকায় এসব বেড়িবাঁধ প্লাবিত হয়েও লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ মোকাবিলায় নগদ ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৩৫৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার খবর আমরা পেয়েছি। ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গত মানুষের জন্য নগদ অর্থসহ আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুদ আছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আমরা দাঁড়াব।

সংবাদটি শেয়ার করুন