৩৭ হাজার টাকা চুক্তি, টানা ২ দিন ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘সাপে কাটা’ রোগীর চিকিৎসা!

প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২১

৩৭ হাজার টাকা চুক্তি, টানা ২ দিন ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘সাপে কাটা’ রোগীর চিকিৎসা!

দুই দিন ধরে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কথিত সাপে কাটা এক তরুণীর চিকিৎসা করছিলেন এক কবিরাজ ও তার দল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পালিয়ে যায় কবিরাজ দল। তবে কথিত চিকিৎসার আগে তরুণীর বাবার কাছ থেকে নেওয়া চুক্তির ৩৭ হাজার টাকা ফেরত দেয়নি সে। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

পরে পুলিশ অসুস্থ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বাড়ি ফিরে যায় সে। কথিত কবিরাজ মো. আলী আকবর হোসেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার দলের সদস্যরা হলো দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের মো. তফেল, মো. হাফিজুল, মো. বাপ্পি, মো. হানিফ ও মো. শাজাহান।

স্থানীয়রা জানায়, রবিবার রাতে ঐ তরুণীকে সাপ বা বিষাক্ত কোনো পোকা কামড় দেয়। এতে সে আতঙ্কিত হয়ে পড়লে তাকে ঐ রাতেই কালকিনিতে কবিরাজ আলী আকবর হোসেনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ঝাড়ফুঁক শেষে আবার বাড়ি ফিরে গত মঙ্গলবার ওই তরুণী ফের অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঐ দিন কবিরাজ মো. আলী আকবরকে খবর দিয়ে ঐ বাড়িতে নিয়ে আসেন তরুণীর স্বজনরা। কবিরাজ ও তার দল এসে বাড়ির উঠানে সামিয়ানা টাঙিয়ে কলাগাছ পুঁতে মোমবাতি, আগরবাতি ও ধূপ জ্বালিয়ে তরুণীকে ঘেরাও দেয়া সীমানার মধ্যে একটি চেয়ারে বসিয়ে ‘আধ্যাত্মিক’ চিকিৎসা শুরু করে। একই সাথে ঢাক-ঢোল সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মন্ত্র পড়ে তরুণীকে ঝাঁড়ফুঁক দিতে থাকেন কবিরাজ। মঙ্গলবার গড়িয়ে বুধবার পর্যন্ত চলে ঝাঁড়ফুঁক। খবর পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারেক বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কবিরাজ ও তার দল পালিয়ে যায়।

তরুণীর স্বজনরা জানান, ঐ তরুণীকে আধ্যাত্মিক চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন কবিরাজ। ৩৭ হাজার টাকা চুক্তিতে ৬ সদস্যের কবিরাজ দলের খাওয়া-থাকা রোগীর অভিভাবক বহন করবে বলে চুক্তি হয়। এই সময়ে ডেকোরেশন সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও তাদের বহন করা কথা ছিলো। ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে রোগীকে সুস্থ্য করে তোলার গ্যারান্টি দেন কবিরাজ।

তরুণীর বাবা জানান, ঐ কবিরাজের চিকিৎসায় সাপে কাটা অনেক রোগী ভালো হয়েছে। এই বিশ্বাসে তিনি ঐ কবিরাজের সাথে ৩৭ হাজার টাকায় চুক্তি করে আগাম টাকা পরিশোধ করেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত কবিরাজের চিকিৎসায় তার মেয়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। পুলিশ আসার খবরে কবিরাজ পালিয়ে যাওয়ার পর বুধবার রাতে তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসায় সুস্থ্য হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে তাকে বাড়ি নিয়ে যান।

জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার নামে ভণ্ডামী চলছিলো। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি পুলিশ নিয়ে ওই বাড়ি গেলে কবিরাজ ও তার দল পালিয়ে যায়। আগরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মহিদুল আলম বলেন, ঐ কবিরাজকে ধরার জন্য স্থানীয়দের কাছে পুলিশের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। তাকে পাওয়া মাত্র আটক করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন