পি‌রোজপু‌রে ধর্ষণ-হত্যায় মৃত্যুদণ্ডের দুই আসামি হাই কোর্টে খালাস

প্রকাশিত: ৪:৪০ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২১

পি‌রোজপু‌রে ধর্ষণ-হত্যায় মৃত্যুদণ্ডের দুই আসামি হাই কোর্টে খালাস

পিরোজপুরে এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামিকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।

খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মেহেদি হাসান স্বপন ও সুমন জমাদ্দার।

আসামিদের আপিল গ্রহণ ও ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আবেদন) খারিজ করে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই রায় দেয়।

আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।

শিশির মনির পরে বলেন, “সুমন জমাদ্দার ঘটনার সময় শিশু ছিলেন। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৬ বছর। তার পক্ষে আসামির জন্মসনদ, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার কাগজপত্র, তার মা-বাবার বিয়ের কাবিননামা আদালতে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু পিরোজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিচার করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।”এ আইনজীবী বলেন, “এসব তুলে ধরে আপিল শুনানিতে বলেছি, সুমন জমাদ্দারের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের বিচার আইনসম্মত হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আইনগত ভুল করেছে।

“সেই সঙ্গে তার স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করেই আরেকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এক্ষেত্রে আমি বলেছি যে, শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সাক্ষ্যগত কোনো মূল্য নেই। হাই কোর্ট আমাদের এসব যুক্তি শুনে সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে দুজনকে খালাসের রায় দিয়েছেন।”

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান বলেন, “এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আসমি সুমন জমাদ্দারের জন্মসনদ সংগ্রহ করেছিলেন। তা আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ করেনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যাবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে নোট পাঠানো হয়েছে।”

২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুটি তার নানার একটি গরুকে ঘাস খাওয়াতে স্কুল মাঠে নিয়ে যায়। পরে সে ঘরে ফিরে না আসায় নানাবাড়ির লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি শুরু করে।

পরদিন দুপুরে প্রতিবেশী শাহজাহান জমাদ্দার বাগানে বিবস্ত্র অবস্থায় মেয়েটির ওড়না পেঁচানো মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ননী গোপাল রায় তার প্রতিবেদনে বলেন, শিশুটিকে ‘ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা’ করা হয়েছে।

পরে ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা ৬ অক্টোবর মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। আসামি সুমন জমাদ্দার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়।

পরের বছর ৩১ জানুয়ারি আসমিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ১৩ জন ও আসামিপক্ষে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি রায় দেন পিরোজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম  কিবরিয়া। তাতে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়।

পরে নিয়ম অনুযায়ী আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন হাই কোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। পাশাপাশি আসামিরা খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করে।

আসামিদের সেই আপিল এবং ডেথ রেফারেন্স শুনানির পর দুই আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দিল হাই কোর্ট।

সংবাদটি শেয়ার করুন