বরিশাল বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হল সরোয়ার- চান- কামাল-ফরহাদকে!

প্রকাশিত: ৯:৫৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০২১

বরিশাল বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হল সরোয়ার- চান- কামাল-ফরহাদকে!

জিয়া শাহীন ॥ বরিশাল বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়লেন মজিবর রহমান সরোয়ার সহ শীর্ষ নেতারা। এ তালিকা নিয়ে এরই মধ্যে বরিশাল জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বহুল আলোচিত বরিশাল মহানগর কমিটিতে সরোয়ার ও জিয়া শিকদারকে বাদ দিয়ে মনিরুজ্জামান ফারুক ও মীর জাহিদুল কবির জাহিদকে যথাক্রমে আহবায়ক ও সদস্য সচিব করা হয়েছে। একই ভাবে বরিশাল দক্ষিণ বিএনপি থেকে বাদ পড়েছেন এবায়দুল হক চান ও এ্যাড. আবুল কালাম শাহীন। উত্তার জেলা থেকেও বাদ গেছেন শীর্ষ দুই নেতা। সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালও জেলার সভাপতির জন্য প্রার্থী ছিলেন। তাকেও উপেক্ষা করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় সহ দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি বরিশাল পৌছামাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে মজিবুর রহমান সরোয়ার ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, দীর্ঘদিন দলের জন্য হামলা/মামলা সহ্য করে দলকে টিকিয়ে রেখেছি। এখন আমাদের মত উচ্চ শিক্ষিতদের বাদ দিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পাস একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে বলার কিছুই নেই।

বেশ কিছুদিন যাবত বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল বরিশালের কমিটিগুলোতে নতুন মুখ আসছে। জেলায় এবায়েদুল হক চান, সম্পাদক এ্যড, আবুল কালাম শাহীন, মহানগরের মচিবুর রহমান সরোয়ার, সম্পাদক জিয়াউদিদ্দন শিকদার, উত্তরে মেজবাউদ্দিন ফরহাদ বাদ পড়ছেন। দীর্ঘদিন এরা একই কমিটিতে সভাপতি সম্পাদকের পদ আটকে রাখায় দলের সাংগঠনিক পক্রিয়া থমকে যাবার অভিযোগ ওঠে। সভাপতি পদের জন্য কেন্দ্রে ব্যাপক তদবির করছিলেন বিলকিস আক্তার জাহান শিরিণ. আলী হায়দার বাবুল, মনিরুজ্জামান ফারুক, সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল। অপর দিকে মহানগর সম্পাদক পদে মীর জাহিদুল কবির জাহিদের নাম বেশি উচ্চরিত ছিল। তবে মহানগর বিএনপিতে সরোয়ারের বিকল্প নেই , এমন দাবি তুলে সম্প্রতি ঢাকা ছুটে যান অর্ধ শতাধিক বরিশাল বিএনপির নেতাকর্মী। তার মহাসচিব মীর্জা ফকরুল ইসলামের কাছে এব্যাপারে স্মারকলিপিও দেন। সরোয়ারের সাথে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদারের সর্মথনেও একই সাথে কেন্দ্রে দাবি জানানো হয়। কিন্তু বুধবার নতুন যে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা হয় তাতে হতভম্ব হয়ে পড়ে সরোয়ার সমর্থকরা। বিস্মিত হন সাধারণ সদস্যরাও। বরিশালের তিনটি আহবায়ক কমিটি থেকেই বাদ পড়েছেন সরোয়ার, চান, কামাল, ফরহাদ। বরিশাল জেলা দক্ষিণের কমিটিতে আহবায়ক হয়েছেন এ্যাড. মজিবুর রহমান নান্টু, সদস্য সচিব আক্তার হোসেন মেবুল, বরিশাল উত্তরে আহবাহয়ক হয়েছেন দেওয়ান মোঃ শহিদুল্লাহ ( মুক্তিযোদ্ধা), সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুল এবং বরিশাল মহানগরের আহবায়ক হয়েছেন মনিরুজামান খান ফারুক যুগ্ম আহবায়ক আলী হায়দার বাবুল এবং সদস্য সচিব মীর হাজিদুল কবির জাহিদ।
বরিশালে সরোয়ার সমর্থক কিংবা সরোয়ারের বিরোধীতাকারীও কল্পনা করেননি সরোয়ার কমিটি থেকে বাদ যাবেন। সরোয়ার একাধিকবার নির্বাচিত এমপি, মন্ত্রিও ছিলেন। সরোয়ার নিজেও বিস্মিত হয়েছেন কমিটি দেখে। কেননা ৪৮ ঘন্টা আগেও তিনি এবং তার সমর্থকরা নিশ্চিত ছিলেন, অন্য সব কমিটি রদবদল হলেও মহানগর কমিটি অপরিবর্তিত থাকবে। কিন্তু এক নেতা এক পদ, এই নীতিতে এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া অটল থাকায় পদ হারাতে হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। সরোয়ার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব একই সাথে মহানগরের সভাপতি। তারপরও মহানগরের পদ টিকিয়ে রাথতে আপ্রান চেষ্টা করেছেন মজিবুর রহমান সরোয়ার।
মানব জমিনকে সরোয়ার জানান, এতদিন দলকে আগলে রাখার পুরুস্কার পেলাম। হামলা, মামলা উপক্ষো করে বিএনপিকে বরিশালে উজ্জিবিত রেখেছি। কিন্তু তার ফল কি পেলাম? আমি, জেলা সভাপতি এবায়েদুল হক চান, সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল দলের জন্য নিবেদিত প্রান ছিললাম। আমরা উচ্চ শিক্ষিত সবাই। অথচ একজন ৬ষ্ঠ শ্রেণী পাসকে মহানগরের দায়িত্ব দেয়া হল।
মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার জিয়া মানব জমিনকে জানান, কেন্দ্র জানে কেন তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। আপনারা কেন্দ্রকে প্রশ্ন করেন।
জেলার নতুন আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব পাওয়া এ্যাড. মজিবর রহমান নান্টু দীর্ঘদিন যাবত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। রাজপথেও ছিলেন সক্রিয়। মানব জমিনকে তিনি জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া তার উপর যে দায়িত্ব প্রদান করেছেন, তিনি প্রানপন চেষ্টা করে যাবেন তা পালন করতে।
মহানগরের নতুন আহহবায়ক মনিরুজামান ফারুক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন রাজপথে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। একজন দলের সব পদ আটকে রাখলে নেতৃত্ব সৃষ্টি হয় না। তিনি বরিশাল বিএনপিকে পূনঃগঠনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাহসী পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানান। সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পাওয়া মীর জাহিদুল কবির জাহিদ ছিলেন উচ্ছাসিত। গুরুত্বপুর্ন এ দায়িত্ব তিনি যেন পালন করতে পারেন সেজন্য বিএনপির সকল নেতা কর্মীদের সাহায্য কামনা করেছেন। একই সাথে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন