ঢাকা ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:২৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২১
ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ৪ কোটি টাকা ঋণ দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। যার মধ্যে মানি লন্ডারিংয়ে সাত আর অর্থ আত্মসাতের মামলায় চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এদিকে রায়ে এসকে সিনহার ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপর ১০ আসামির মধ্যে ২ জনকে খালাস এবং ১ জনকে ৪ বছর এবং অপর সাত জনের ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মামলার আসামিদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ও অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো.মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) কারাগার রয়েছেন।
জামিনে আছেন, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম শামীম ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহউদ্দিন এবং ব্যাংকটির ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।
মামলার অপর চার আসামি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাফিউদ্দিন আসকারী, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা সান্ত্রী রায় ওরফে সিমি ও তার স্বামী রণজিৎ চন্দ্র সাহা পলাতক রয়েছেন।
এর আগে দুদক এ মামলায় চার্জশিটের ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্য আদালতে দিয়েছেন। যার মধ্যে আসামি সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহার বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা, ভাতিজা সংখজিত কুমার সিনহা, আপিল বিভাগের বেঞ্চ রিডার মো. মাহবুব হোসেন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এসকে সিনহার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘তার ভাই একে সিনহা সরকারি পদে আছেন বলে তার (এসকে সিনহা) নামে ব্যাংকে হিসাব খোলা সমস্যা রয়েছে তাই তাকে (নরেন্দ্র কুমার সিনহা) একটি হিসাব খুলতে বলেন। সে অনুযায়ী শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক উত্তরা শাখায় নরেন্দ্র কুমার সিনহা ও ভাতিজা সংখজিত কুমার সিনহার যৌথ নামে ২০১৬ সালে হিসাব খোলেন। তিনি ওই হিসাবে কোন টাকা জমা দেননি। কখনো ওই হিসাব থেকে কোন টাকাও উত্তোলন করেননি। পরে জানতে পেরেছেন যে, ওই হিসাবে দুইটি চেকের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার এবং ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা জমা হয়েছিল। জানতে পারে তার ভাই এসকে সিনহার সুপ্রিম কোর্টের সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে তাদের হিসাবে ওই টাকা জামা হয়েছিল। আর ভাতিজা বলেছেন, হিসাব খোলার পর চেকের প্রতিটি পাতায় তার স্বাক্ষর নিয়ে নেন চাচা এসকে সিনহা। পরে কীভাবে ওই হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে ওই যৌথ হিসাব থেকে ৭৮ লাখ টাকা তার (সংখজিত কুমার সিনহা) ব্যাক্তি হিসাব সাভারস্থ ঢাকা ব্যাংক ইপিজেড শাখায় হস্তান্তরিত হয়েছিল মর্মে তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। এরপর এসকে সিনহার নির্দেশে সেখান থেকে ৫০ লাখ টাকা ঢাকা ব্যাংক উত্তরা শাখায় একটি হিসাবে এবং ১০ লাখ টাকা আরেকটি এফডিআর করা হয়। অবশিষ্ট ১৮ লাখ টাকা ইডিজেড শাখার হিসাবে জমা রাখা হয়। সব কিছুই তিনি চাচা এসকে সিনহার নির্দেশে করেছেন।’
২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। একই বছর ১০ ডিসেম্বর চার্জশিট দাখিল হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট থেকে মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সিনহা। তিনি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান বলে অভিযোগ। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এ মামলায় সেসহ চার পলাতক দেখিয়ে চার্জশিট দাখিল হয়। পরে আদালত তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। এরপর তাদের সম্পদ ক্রোকসহ জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। এরপরই তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ফারমার্স ব্যাংকে শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার নামে মঞ্জুরকৃত ঋণের ৪ কোটি টাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সুপ্রিমকোর্ট সোনালী ব্যাংক শাখার হিসাবে জমা হয়। সঞ্চয়ী হিসাব নং : ৪৪৩৫৪৩৪০০৪৪৭৫-এ জমা হওয়ার পর ওই টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর করে উত্তোলন করা হয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যদের লাভবান করতে এ ধরনের অপরাধ করেন। তারা অবৈধভাবে ভুয়া ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে নগদে উত্তোলন ও বিভিন্ন পে-অর্ডারের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়র নামীয় হিসাবে হস্তান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। পরে সেই অর্থ নিজেদের ভোগদখলে রেখে তার অবৈধ প্রকৃতি, উৎস অবস্থান গোপন বা এর ছদ্মাবরণে পাঁচার করেছেন মর্মে তদন্তে প্রমাণিত হয়।
প্রকাশকঃ ডাক্তার জি.কে চক্রবর্তী।
সম্পাদকঃ কাজী মফিজুল ইসলাম।
প্রধান সম্পাদকঃ নুসরাত রসিদ।
নির্বাহী সম্পাদকঃ জাকিরুল মোমিন।
মোবাইলঃ 01711225620
মেইলঃ protidin.barisal@gmail.com
ঠিকানাঃ প্যারারা রোড, বরিশাল ৮২০০।
Design and developed by Engieer BD Network