আগৈলঝাড়ায় খ্রিষ্টান দেব প্রসাদ হত্যা ॥ ৭ মাসে চার বার তদন্ত কর্মকর্তা বদল, রহস্য উদঘাটন হয়নি

প্রকাশিত: ৬:৩৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২১

আগৈলঝাড়ায় খ্রিষ্টান দেব প্রসাদ হত্যা ॥ ৭ মাসে চার বার তদন্ত কর্মকর্তা বদল, রহস্য উদঘাটন হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের মধ্যবাকাল গ্রামে আলোচিত খ্রিষ্টান দেব প্রসাদ কর্মকার হত্যা মামলাটি ৭ মাসে চার বার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে। গত ৭ মাসে হত্যা রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের দেব প্রসাদ কর্মকারের সাথে একই গ্রামের কাদের ভাট্রির সঙ্গে মধ্যবাকাল মৌজার ৭৮ শতাংশ জমাজমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। জমি ফিরে পেতে দেব প্রসাদ কর্মকার আদালতে মামলা করলে ২০০৭ সালে আদালতের রায়ে সে জমি ফিরে পান। জমি ফিরে পাওয়ার পর থেকে প্রতিপক্ষ একই গ্রামের কাদের ভাট্রি (৭০), তার ছেলে ফিরোজ ভাট্রি (৩৫), ফারুক ভাট্রি (৪০) সাইফুল ভাট্রি (৩০) ফরিদ ভাট্রি (৩৩), মেয়ে জামাতারা দেব প্রসাদ কর্মকারকে অপহরন করে হত্যার হুমকি দেন। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আগৈলঝাড়া থানায় ৫টি সাধারণ ডায়রী করেছিলন নিহত দেব প্রসাদ মর্ককার। ২২ এপ্রিল রাতে সে নিঁখোজ হন। ২৫ এপ্রিল গ্রামের পরিত্যাক্ত ভিটা থেকে লাশ উদ্ধার করে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ।
মামলার বাদী ও নিহতের কন্যা এ্যালিজাবেথ কর্মকার (২৬) অভিযোগ করে বলেন, প্রতিপক্ষ কাদের ভাট্রি ও তার সন্ত্রাসী ৪ পুত্র সহযোগীদের নিয়ে বাবাকে অপহরন করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। ২৫ এপ্রিল আমি মামলা করতে গেলে আগৈলঝাড়া থানা ওসি মামলা নেয়নি। মামলা না নেওয়ায় গত ২৮ এপ্রিল বরিশাল পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাৎ করে মামলা না নেওয়ার বিষয়টি অবহিত করলে পুলিশ সুপার মামালা নিতে ওসি আগৈলঝাড়াকে নির্দেশে দেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশের ওসি গোলাম ছরোয়ার ৮ মে ২০২১ মামলা নেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহমান লাশের সুরাতহাল রিপোর্টে লাশের চোখ দুটি উপরে ফেলা, পায়ের আঙ্গুলগুলোর নক তুলে ফেলা ছিল, পেটের নিচে ও মাথায় রক্তাক্ত বড় আকারের আঘাতের চিহ্নর কথা উল্লেখ করেনি এ। অথচ ময়না তদন্তের রিপোর্টে এসব এসেছে। এসআই আব্দুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বৃষপানের আলামত পেয়েছি এবং সেভাবেই সুরাতহাল করেছি।
নিহতের কন্যা এ্যালিজাবেথ কর্মকার আরো করে বলেন, পরবর্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে বরিশাল পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করলে পুলিশ সুপার গত ৮ মে মামলাটি তদন্তর জন্য বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ মাহাবুব হোসেনকে দায়িত্ব দেন। কিছুদিন পরে এসআই মাহাবুব বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেলে পুনরায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। পরে পুলিশ সুপার বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল মোল্লাকে মামলাটি তদন্তর জন্য দায়িত্ব দেন। এসআই সোহেল মোল্লার আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হত্যা মামলার আসামিদের রক্ষায় বাবা আত্মহত্যা করেছে মর্মে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায়। আমি এসআই সোহেলের বিরুদ্ধে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজির কাছে অভিযোগ করলে ডিআইজি গত ১২ অক্টোবর মামলাটি তদন্তর জন্য বরিশাল পিবিআইকে দায়িত্ব প্রদান করেন। বরিশাল পিবিআইর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ নাঈম বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করেছে। কিন্তু ৪ বার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও কেউই হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমাদেরকে পিতার মত পরিনতির ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাদের ভাট্রি ও ফিরোজ ভাট্রি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দে প্রসাদ কর্মকার আত্মহত্যা করেছে। জমি নিয়ে বিরোধের কারনে হয়রানী করতে মামলায় আমাদের জড়াতে চেষ্টা করছে। মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইর উপ-পরিদর্শক মোঃ নাঈম বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে খুব শীঘ্রই রহস্য উদঘাটন হবে। বরিশাল পিবিআইর পুলিশ সুপার মোঃ হুমায়ুন কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থেই এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। খুব শীঘ্রই হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন