এবার মেঘনায় বিলাসবহুল সুরভী-৯ লঞ্চে আগুন ॥ প্রাণে বাঁচল হাজারো যাত্রী

প্রকাশিত: ৫:৪৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২২

এবার মেঘনায় বিলাসবহুল সুরভী-৯ লঞ্চে আগুন ॥ প্রাণে বাঁচল হাজারো যাত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে ॥ ঢাকা বরগুনা রুটের অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকান্ডের রেশ না কাটতেই এবার বরিশাল-ঢাকা রুটের বিলাসবহুল সুরভী -৯ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। মধ্যরাতে মাঝ নদীতে এ ঘটনায় দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলা হলে প্রাণে বেচে যায় সহস্রাধি যাত্রী। লঞ্চে আগুন লাগার ভিডিও ধারণ করায় যাত্রী ও সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়। এ ঘটনায় ওই লঞ্চের ম্যানেজারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন লঞ্চটির মালিকদের একজন রেজিন-উল কবির।

এমভি সুরভী-৯ লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা যুনায়েদ খন্দকার নামের কলেজ ছাত্র জানান, ‘লঞ্চটি ঢাকা সদর ঘাট থেকে রাত ৯টায় বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ঘন্টা দুয়েক পর হঠাৎ যাত্রীরা আগুর আগুন বলে চিৎকার করে। এতে পুরো লঞ্চে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কোন একজন যাত্রী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা চান। এর পর পরই পুলিশ চাঁদপুরের মোহনপুর সুরভী-৯ লঞ্চটি আটকে দেয় ।
তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা নাকি লঞ্চটির ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের ধোয়া বের হতে দেখেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে

ওই যাত্রী বলেন, ‘প্রথমে একটু হই-হুল্লুর হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ আসার পরে সবাই শান্ত হয়েছে। চাদপুরে ঘাটে এনে লঞ্চটির বাইরে থেকে আটকে দেয়া হয়। পুলিশ লঞ্চ স্টাফদের সাথে কথা বলছে। তবে লঞ্চের একজন স্টাফ জানিয়েছেন, কোন আগুন বা ধোয়া হয়নি। লঞ্চটি এক ইঞ্জিনে চলছিল। এ কারণে কোন এক যাত্রী ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে অভিযোগ করেছে। এ কারণে শত শত যাত্রী মাঝ রাতে ভোগান্তিতে পড়ছে। পরে পুলিশ লঞ্চটি ছেড়ে দিলে রোববার বেলা ১১টায় বরিশাল খেয়াঘাটে এসে পৌঁছায় লঞ্চটি।
যাত্রীদের অভিযোগ, রাতে ইঞ্জিন রুমে এবং সাইলেন্সারে আগুন লাগার দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও করায় তাদেরকে মারধর করেন লঞ্চটির কর্মচারীরা। আগুন লাগার দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন বেসরকারি দুই টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসনও। এরা হচ্ছেন চ্যানেল টুয়েন্টিফোর ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন বরিশাল টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সদস্য রুহুল আমিন ও দেওয়ান মোহন । আহতরা অভিযোগ করেছেন তাদের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে লঞ্চের ম্যানেজার মিজানকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে সুরভী ৯-এর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে খবর ঘটনাস্থলে সেখানে যান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের তদন্তে লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে আগুন লাগার নানা আলামত পাওয়া গেছে। যে ইঞ্জিনে আগুন লাগে তার ধোয়া নির্গমন পাইপটি পুড়ে গেছে। এ ছাড়া লঞ্চটি যে এক ইঞ্জিনে চলছিল তাও স্বীকার করেছে এর মালিকপক্ষ।বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল বলেই এমনটি হয়েছে। লঞ্চটির মালিকদের একজন রেজিন-উল কবির মোবাইল ফোনে বলেন, যাত্রী এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় লঞ্চের ম্যানেজার মিজানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধা প্রদান ও নির্যাতনের প্রতিবাদে অপরাধীদের শাস্তির দাবী জানান বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন। মিডিয়া কর্মীদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি ( বিআরইউ) । এক বিবৃত্তিতে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মিথুন সাহা সকল সদস্যদের পক্ষে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এমন হামলা ন্যাক্কারজনক।অবিলম্বে হামলাকারীদের আইনের আওয়াত এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানায়। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দ।

সংবাদটি শেয়ার করুন