বরিশালে শিশুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২

বরিশালে শিশুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল নগরের রুপাতলী রেডিও সেন্টার সংলগ্ন পরিত্যাক্ত জমি থেকে ইয়াসিন নামে ৯ বছরের এক শিশুর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত শিশুটি সিএনজি চালক ছগির হোসেনের ছেলে। ছগির ঢাকার মহাখালীতে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বসবাস করেন এবং সেখানে সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে শিশুটি তার দাদী শিরীন বেগমের সাথে বরগুনা সদরের বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি গ্রামে বসবাস করতেন।
দাদী শিরীন বেগম জানান, তিনি গত সোমবার নাতি ইয়াসিনকে নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালে আসেন। ওইদিন থেকে তিনি নাতিকে নিয়ে বরিশাল নগরের রুপাতলীস্থ রজ্জব আলী খান জামে মসজিদ সংলগ্ন বোন আলেয়া বেগমের বাসায় ছিলেন।
তিনি বলেন, মূলত শারিরীক অবস্থা খারাপ থাকায় চিকিৎসা চালাতে গিয়ে তার সাথে থাকা টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর তিনি বোনের বাসায় থেকে টাকা উপার্জনের জন্য দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। টাকা যোগার হওয়ায় আজ নাতিকে নিয়ে বরগুনাতে যাওয়ার কথা ছিলো। তাকে আগামীকাল রোববার সেখানকার একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করার কথা ছিলো।
তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার সকালে নাতি ইয়াসিনকে বোন আলেয়ার বাসায় রেখে কাজে যান এবং দুপুরের মধ্যে ফিরে আসেন। এসে নাতিকে বাসায় না দেখে কোথায় গেছে জানতে চাইলে বোন জানায় বেলা ১১ টার দিকে বাহিরে গেছে। ধরে নিয়েছিলাম খেলাধুলা করতে বাহিরে গেছে হয়তো। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফিরে না আসায় বোন আলেয়া, তার স্বামী সিরাজ ও ছেলে আলামিনকে নিয়ে খুজতে বের হই। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোন খোজ না পেয়ে ছেলেকে বিষয়টি জানাই। ছেলে ও তার বর্তমান বউ আজ শনিবার সকালে বরিশালে এসে পৌছায়। এরপর কেউ একজন জানায় যে বসুন্ধরা হাউজিং এর মধ্যে রেডিও সেন্টারের দেয়াল সংলগ্ন পরিত্যাক্ত জমিতে এক শিশুর মরদেহ পাওয়া গেছে। পরে এখানে এসে আমার নাতিরই গলাকাটা মরদেহ পরে থাকতে দেখি।
ইয়াসিনের বাবা ছগির জানান, তার প্রথম সংসারে এক মেয়ে ও ছেলে সন্তান রয়েছে। যারমধ্যে এই ছেলে ছোট। তার বয়স যখন ৪/৫ তখন ফাতেমা নামের ওই নারীর সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর ছেলে ও মেয়ে তার এবং তার মায়ের কাছে থেকে বড় হচ্ছিলো। বছর খানেক আগে মনোয়ারা নামে এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি। যার আগের সংসারে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তবে সন্তানদের নিয়ে তাওদর মধ্যে কোন ধরনের বিরোধ ছিলো না তাদের।
ছগিরের বর্তমান স্ত্রী মনোয়ারা বলেন, ওদের আমি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতাম। ঢাকা থেকে ভালোভাবেই বরিশালে আসে। কিন্তু এরমধ্যে এ হত্যাকান্ড কোনভাবে মেনে নিতে পারছি না। কারা কেনই বা এই শিশুটিকে এভাবে হত্যা করবে বুঝতে পারছি না। আমাদের সাথে কারও শত্রুতাও নেই।
এদিকে ছগিরের খালাতো ভাই আলামিন জানান, তিনি ৭ মাস আগে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পর থেকে তার শশুর জাকির সর্দার ও তাদের পরিবার কোন খোজ নেয়নি তার বরং নানানভাবে হয়রানি করে আসছে।
তার দাবি শশুর জাকির সর্দার ও তার পরিবার এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। একইসাথে তিনি ইমরান নামে এক যুবককেও সন্দেহ করেন।
তবে আলামিনের মা আলেয়া বেগম কাউকেই সন্দেহ করতে পারছেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, শিশুটিকে যেভাবে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে তা দুঃখজনক ও লোমহর্ষক। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, শনিবার সকাল ৯টার দিকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখেতে পাই একটি শিশুর গলাকাটা মরদেহ পড়ে আছে।
রুপাতলী রেডিও সেন্টারের পিছনে একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের ওপর শিশুটিকে রাতের আধারে কেউ জবাই করে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি হত্যাকান্ড এটা নিশ্চিত। তবে বিস্তারিত তদন্তের পরেই বলা যাবে। আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুটির দাদির বোন আলেয়া, তার স্বামী সিরাজুল ইসলাম ও ছেলে আলামিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে। এদিকে বেলা ১২ টায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন