ধর্ম অবমাননা/ মূল অ‌ভিযুক্ত বাপন দাস‌কে নিরাপত্তা ডি‌জিটাল আই‌নে ৮ বছর কারাদন্ড

প্রকাশিত: ৮:০১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২২

ধর্ম অবমাননা/ মূল অ‌ভিযুক্ত বাপন দাস‌কে নিরাপত্তা ডি‌জিটাল আই‌নে  ৮ বছর কারাদন্ড

স্টাফ রি‌পোর্টার ব‌রিশাল থে‌কে / ২০১৯ সা‌লের ২৫ অ‌ক্টোবর। ফেসবু‌কের এক‌টি স্টাটাস‌কে কেন্দ্র ক‌রে উত্তাল হ‌য়ে উ‌ঠে ভোল। মুসল্লী‌দের ব‌্যাপক বি‌ক্ষো‌ভে পু‌লিশ গু‌লি চালা‌লে নিহত হয় চারজন। এঘটনার আড়াই বছর পর ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় মূল অ‌ভিযুক্ত বাপন দা‌সকে ৮ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।

বরিশাল বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম ফারুক রবিবার দুপুরে রায় ঘোষণা করেন। এ সময় মামলার একমাত্র আসামি বাপন দাস আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বরিশাল বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. ইশতিয়াক আহমেদ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মামলায় বাপন দাসকে ৩টি ধারায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সবগুলো ধারার রায় চলবে একই সঙ্গে। রায়ে ৩৪ ধারায় ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ২ বছরের কারাদণ্ড, ২৮/১ ধারায় ২ বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ৩১/১ ধারায় ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর বিকেলে ভোলার বোরহান উদ্দীন উপজেলার বাসিন্দা বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) নামে এক তরুণের নিজের ছবিসংবলিত ফেসবুক আইডি থেকে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে মন্তব্য করে কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুর কাছে মেসেজ পাঠানো হয়। এতে এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ওইদিন সন্ধ্যার পর বিপ্লব বৈদ্য বোরহানউদ্দিন থানায় তার আইডি হ্যাক হয়েছে-এই মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে আসেন। এ সময় পুলিশ বিষয়টি তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিপ্লব বৈদ্যকে আটক করে।জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে পটুয়াখালীর মো. ইমন (১৮) ও কামরুল ইসলাম শরিফ (১৮) নামে দুই তরুণকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় ২৭ অক্টোবর এ ঘটনায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে চারজন মারা যায়।

এরপর ফেসবুকে কটূক্তির ঘটনায় বিপ্লব বৈদ্য, মো. ইমন ও কামরুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ।

২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি মামলাটির তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তদন্তভার ন্যস্ত হয় পিবিআই’র বরিশালের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমানের ওপর।

তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং জব্দকৃত মুঠোফোন ও অন্যান্য ডিভাইসের ফরেনসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বেরিয়ে আসে এই মামলায় গ্রেপ্তার বিপ্লব বৈদ্য, মো. ইমন (১৮) ও কামরুল ইসলাম শরিফের (১৮) বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়।

মূলত বিপ্লব বৈদ্যের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে যে ফোন থেকে এই অপপ্রচার চালানো হয়েছিল সেই ফোনটি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চাচুয়া গ্রামের বিকাশ দাসের ছেলে বাপন দাসের (২৫)।

এরপর বাপন দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে বাপন দাস স্বীকার করেন বিষয়টি। এরপর তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মূলত ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অর্থ আদায়ের জন্য বাপন এটা করেন। কিন্তু বিপ্লবের কাছে অর্থ দাবি করে না পাওয়ায় তিনি এই অপপ্রচার চালান।পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামিকে বাদ দিয়ে বাপন দাসকে একমাত্র আসামি করে ২০২০ সালের ১ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন