ঢাকা ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৫৯ অপরাহ্ণ, জুন ৬, ২০২২
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘর থেকে ডেকে নিয়ে দৈনিক গণকন্ঠের উপজেলা প্রতিনিধি ও দলিল লেখক আবু জাফর প্রদীপ (৪২) কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রোববার রাত নয়টার দিকে উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রজপাড়া গ্রামের বাসা থেকে ভাই ইলিয়াস হোসেন সোহাগ ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রদীপ নিখোঁজ থাকে। বহু খোঁজাখঁজির পর কলাপাড়া থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে পুলিশ ও স্থানীয়রা প্রদীপের লাশ বাড়ির পুকুরে ভাসতে দেখে উদ্ধার করে। নিহত প্রদীপের স্ত্রী মোসাঃ জিনিয়া আক্তারের প্রাথমিক অভিযোগ প্রদীপের সেজ ভাই ইলিয়াস হোসেন সোহাগ এর সঙ্গে জমিজমার বিরোধ চলছিলো। সেই জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রদীপের স্ত্রী জিনিয়া আক্তার বলেন, প্রদীপ বাড়িতেই ছিলেন। রোববার রাত সাড়ে আটটার সময় তাঁর সেজ ভাই ইলিয়াস হোসেন সোহাগ হঠাৎ বাড়িতে আসেন এবং প্রদীপকে ডেকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আমরা তখন কোনো কিছুই বুঝতে পারিনি। মনে করছি, ভাই ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। রাত গভীর হওয়ার পর প্রদীপ ঘরে ফিরে না আসায় আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। তখন সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করতে থাকি।
কোথাও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এরপর পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে বাড়ির নিকটের একটি পুকুর থেকে প্রদীপের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তখন সময় রাত দেড়টা।
প্রদীপের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে আরও বলেন, প্রদীপের সেজ ভাই সোহাগ বাড়িতে থাকতেন না। তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন। ইলিয়াস হোসেন সোহাগ পৈত্রিক বাড়ির অংশ বিক্রি করার জন্য কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে এসে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। প্রদীপ এতে আপত্তি করেছিল এবং সাইনবোর্ডটি তুলে ফেলে দেয়। এ নিয়ে প্রদীপের সাথে সোহাগের বিরোধ হয়। গত রমজান মাসে পরিবারের সবাই বসে দু’ভাইয়ের এ বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেয়।
প্রদীপের স্ত্রীসহ নিকট আত্মীয়দের কয়েকজন বলেন, বাড়ির জমি বিক্রির ঘটনার জের ধরে প্রদীপের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। এ হত্যাকান্ডের সাথে হয়তো একাধিক লোক জড়িত ছিল। এদিকে প্রদীপ হত্যার পর থেকে তাঁর সেজ ভাই সোহাগের মুঠোফোনটি বন্ধ রয়েছে। সে-ও গা ঢাকা দিয়েছে।
প্রদীপ একজন ব্যবসায়ী। বাড়ির কাছে যৌথ মালিকানায় তাঁর ইট ভাটার ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়া সে সরেজমিন বার্তা নামে একটি দৈনিক পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। কলাপাড়া সাংবাদিক ক্লাব নামে স্থানীয় একটি সাংবাদিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি।
প্রদীপের স্ত্রী জিনিয়া আক্তার এবং শাশুড়ি পিয়ারা বেগম বলেন, ‘প্রদীপ রাতের বেলা বাড়ি থেকে কখনই বের হতেন না। নিজের জীবন নিয়ে তিনি শঙ্কিত ছিলেন। এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। দোষীকে আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।’
প্রদীপ এবং তাঁর স্ত্রী জিনিয়া আক্তার আপন মামাত-ফুপাত ভাই-বোন। প্রেম করে তাঁরা বিয়ে করেন। বেশ সুখ-শান্তিতেই কাটছিল তাঁদের সংসার। প্রদীপের এমন নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রদীপের তাহসিনা আক্তার প্রমি নামে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কন্যা সন্তান এবং আলভীর নামে তিন বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। তাঁর বাবার নাম মৃত আবদুল খালেক পাহলান।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম বলেন, ‘প্রদীপের ভাইর সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল এটা আমরা শুনেছি। গত রাতেও তাঁর ওই ভাইর সাথে ঝগড়া হয়েছিল। ভাই যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে এটা পরিষ্কার। এ ঘটনার পর থেকে ভাই পলাতক রয়েছে। অপরাধীকে ধরতে জোর চেষ্টা চলছে।’ পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত প্রদীপের নাভির ডানপাশে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ডান হাতেও মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করা হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
প্রকাশকঃ ডাক্তার জি.কে চক্রবর্তী।
সম্পাদকঃ কাজী মফিজুল ইসলাম।
প্রধান সম্পাদকঃ নুসরাত রসিদ।
নির্বাহী সম্পাদকঃ জাকিরুল মোমিন।
মোবাইলঃ 01711225620
মেইলঃ protidin.barisal@gmail.com
ঠিকানাঃ প্যারারা রোড, বরিশাল ৮২০০।
Design and developed by Engieer BD Network