বরিশাল-ভোলা সীমান্তে ২ গ্রামবাসী= পুলিশের ত্রিমূখী সংঘর্ষ: গুলিবর্ষণ ॥ আহত ১৫

প্রকাশিত: ৫:৪৯ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২২

বরিশাল-ভোলা সীমান্তে ২ গ্রামবাসী= পুলিশের ত্রিমূখী সংঘর্ষ: গুলিবর্ষণ ॥ আহত ১৫

বরিশাল ও ভোলার সীমান্তবর্তী মহিষমারীতে দুই গ্রামবাসী এবং পুলিশের মধ্যে ত্রিমূখী সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৮ রাউন্ড গুলি করেছে পুলিশ। সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণে আট নারীসহ ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে নারীসহ ১২ জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন এবং ভোলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মহিষমারী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভোলা এবং বরিশাল জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী শ্রীপুর ইউনিয়নের চৌকিদার মাহেব হোসেন বলেন, ‘শ্রীপুরের বাসিন্দা কাজী শাখায়াত হোসেন রুবেল তার লোকজন নিয়ে ভোলার ভেদুরিয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। এসময় তাদের সাথে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র ছিলো। সীমানার মধ্যবর্তী স্থানে থাকা বরিশাল ও ভোলা জেলা পুলিশের যৌথ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের বাধা প্রদান করে। একপর্যায় রুবেল কাজীর লোকেরা পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি আহত জামাল রাঢ়ী ও নান্নু হাওলাদার বলেন, শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। যদি সীমানা নিয়ে জটিলতা থাকে তাহলে তো নির্বাচন হবে না। বর্তমান চেয়ারম্যান হারুন মোল্লাই থাকবেন চেয়ারম্যান। তাই হারুন মোল্লা ভোলার চরচটকিমারা গ্রাম থেকে লোকজন ভাড়া করে এনে মহিষমারীর বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এরপর আমরা বাধা দিলে হারুন পুলিশ ভাড়া করে এনে অহেতুক আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ করিয়েছেন।

গুলিবিদ্ধ শ্রীপুরের আবুল হোসেন মাঝির ছেলে মো. রিয়াজ জানিয়েছেন, ‘নদী ভাঙনে আমাদের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। বরিশাল-ভোলা সীমান্তবর্তী মহিষমারী গ্রামে চরের মধ্যে প্রায় দুইশ’র মত ঘর রয়েছে। শ্রীপুরের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রুবেল আমাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু নতুন চেয়ারম্যান হারুনর রশিদ মোল্লা আমাদের উচ্ছেদ করে সেই জমি দখলের চেষ্টা করছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ভোলার লোকজন আমাদের উৎখাত করতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে ওপর হামলা করাসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে উল্টো তারাও আমাদের ওপর বৃষ্টিরমত গুলি ছুড়তে থাকে।

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনিরুল ইসলাম পলাশ বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সীমানা বিরোধকে সামনে আনতে চাইছেন চেয়ারম্যান হারুন। তাই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে সে।

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মোল্লা বলেন, ‘বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ এবং ভোলা সদরের ভেদুরিয়া এলাকার সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। স্থানীয় রুবেল কাজী দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল এবং ভোলার অংশের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছেন। এ নিয়ে প্রায়শই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুরে পুনরায় হামলা এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। শুনেছি রুবেল কাজীর লোকজন অস্ত্র নিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করে। এসময় পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাল্টা গুলি করে। তবে এই ঘটনায় কতজন আহত হয়েছে সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

অভিযোগ অস্বীকার করে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি রুবেল কাজী বলেন, ঘটনার সময় আমি মেহেন্দিগঞ্জে ছিলাম। এর আগে আমি বরিশালে অবস্থান করছিলাম। পূর্বেও বরিশাল-ভোলার সীমানা নিয়ে একাধিকবার হামলা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এবার গুলিবর্ষণের ঘটনা প্রথম। বিনা উস্কানিতে গ্রামবাসীর ওপর গুলি করেছে পুলিশ।

তিনি বলেন, যেখানে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে পুলিশ ক্যাম্পের দূরত্ব অন্তত ২ কিলোমিটার। ভোলার পুলিশ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে মহিষমারী গ্রামের মধ্যে ঢুকে নারী-পুরুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুলিবর্ষণ করেছে। এতে আটজন নারীসহ মোট ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা ভোলা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এনায়েত হোসেন বলেন- শ্রীপুর এবং ভেদুরিয়ার মধ্যবর্তী একটি ব্রিজ রয়েছে। ব্রিজের দুই প্রান্তের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ জমিতে বালু ভরাট করে ঘর নির্মাণ করছিলেন শ্রীপুরের রুবেল কাজী। এতে বাধা দেয় ভেদুরিয়ার বাসিন্দারা।

ওসি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ঘটনার সময় রুবেল কাজী স্থানীয় অসংখ্য নারী-পুরুষ নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখল করতে যাচ্ছিলেন। এসময় সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বরিশাল এবং ভোলা জেলা পুলিশের সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এসময় তাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ছিলো। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা জমি দখলের জন্য অগ্রসর হয়। একপর্যায় পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগান থেকে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। যতটুকু যেনেছি তাতে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি। তবে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে। কতজন আহত হয়েছে সে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে।

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কবির উদ্দিন বলেন, বিকাল ৫টার দিকে ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে দুই নারী এবং এক পুরুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চিকিৎসা চলছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন