সড়ক অন্ধকার ॥ নেই পানি ॥ বরিশালের মানুষ চরম বিপাকে

প্রকাশিত: ৫:১৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২

সড়ক অন্ধকার ॥ নেই পানি ॥ বরিশালের মানুষ চরম বিপাকে

স্টাফ রিপোর্টার॥ ৫৯ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুৎবিল পরিশোধ না করায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সড়ক বাতি ও পানির পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কোন প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই ১৯ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় বলে দাবি সিটি কর্পোরেশনের। এর ফলে অন্ধকার ভূতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে গোটা নগরজুড়ে। পানি শূণ্য অবস্থায় চরম বিপাকে নগরবাসী। এর অবস্থা চলছে তিনদিন যাবত।

বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) এর বরিশাল বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নগরবাসির সেবায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বিল পরিশোধ করছে না। এর ফলে বছরে বছরে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অর্ধশত কোটি ছাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বরিশাল নগরীতে দুটি বিদ্যুৎ বিক্রয় এবং বিতরণ বিভাগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে আমাদের ডিভিশন ১ এর অধিনে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসছে। কিন্তু কোন মাসেই বিল পরিশোধ করছে না নগর কর্তৃপক্ষ। এর ফলে দুটি ডিভিশনে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ কোটি টাকার বেশি।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদ অর্থাৎ তৎকালিন মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরনের সময় থেকেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হচ্ছে না। এরপর তৃতীয় এবং বর্তমান চতুর্থ পরিষদও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না। তবে বর্তমান পরিষদ বিদ্যুৎ বিভাগের সিটি কর থেকে বিদ্যুৎ বিল সমন্বয় করে। সেটা বকেয়ার তুলনায় কিছুই নয়। তাই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা হয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘গত ১৯ সেপ্টেম্বর আমরা আমাদের অধিনে থাকা ৩০টি স্ট্রিট লাইনের মধ্যে মাত্র ৭টি স্ট্রিট লাইটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। তবে কোন পানির পাম্পের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। যদিও বাকি স্ট্রিট লাইটের বিদ্যুৎ সংযোগ ২০ সেপ্টেম্বর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নিজেরাই কেটেছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের এই কর্মকর্তার।

পরিচালনা ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ টি এম তারিকুল ইসলাম বলেন, বিসিসির কাছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। সেই বকেয়া পরিশোধে অসংখ্যবার তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আশানুরূপ কোনো সাড়া দেয়নি। সর্বশেষ পরিশোধের তারিখ ছিল ১৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু নির্ধারিত সময়েও তারা তা পরিশোধ করেনি। ফলে অভিযান চালিয়ে সড়কবাতির লাইন বিচ্ছিন্ন করতে হচ্ছে।

সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ধ্যার পরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে পূর্বে আমাদের কোন প্রকার নোটিশও দেয়নি বিদ্যুৎ বিভাগ। সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেছে। কিন্তু তারা কেউ ফোন ধরছে না।

স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল নিয়ে জটিলতা নতুন নয় যে চাইলেই সমাধান করা যাবে। এই সমস্যা সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর থেকেই চলে আসছে। যে কারণে বকেয়া বিলের পরিমাণ দীর্ঘ হয়েছে। তার পরেও আমাদের বর্তমান মেয়র মহোদয় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

তাছাড়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগকে ৮০ লাখ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। এর আগেও কয়েক কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বরের টাকা জমা হওয়ার পরপরই সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের সড়ক বাতি এবং ১১টি পানির পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবেন বলেও জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা।
বিএম কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা কলেজছাত্র ইকবাল জানান, তিনদিন ধরে সড়কবাতি জ্বলছে না। আর সিটি করপোরেশনের পানির লাইনেও পানি আসছে না। আমরা খুব ভোগান্তিতে রয়েছি। চলাচল করতে কষ্ট হয়। কী কারণে এমন হচ্ছে তা জানি না।’ সড়ক অন্ধকারেও কোন রকম চলাফেরা করা যায়, কিন্তু পানিবিহীন কতক্ষণ থাকা যায়?

সংবাদটি শেয়ার করুন