শেবাচিম হাসপাতালে হাজার বেড বাড়ালেও হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৪:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩

শেবাচিম হাসপাতালে হাজার বেড বাড়ালেও হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশের আট বিভাগে পুরোনা হাসপাতালের প্রত্যেকটিতে এক হাজার বেড বা শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। কিন্তু বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল ঘুরে যা বুঝলাম, তাতে এখানে এক হাজার বেডেও কাজ হবে না, আরও বেশি লাগবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে নির্মাণাধীন শহীদ সুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতাল, বিভাগীয় ক্যান্সার হাসপাতাল ও শেবাচিম হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শেবাচিম হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে যা দেখলাম, তাতে চিত্রটা ভালো মনে হলো না। কারণ অনেক বেশি রোগী, ফলে মেঝেতে পা ফেলার জায়গা নেই। নতুন ভবনে মেডিসিন ইউনিট নেওয়া হয়েছে, তারপরও সেখানে দেখলাম করিডোরে-বারান্দায় অনেক রোগী। আর পুরাতন ভবনেও তো অনেক রোগী, যেখানে মেঝেতেও রোগী রয়েছে।
তিনি বলেন, রোগীরা চিকিৎসা যেভাবে নিচ্ছেন, তা আমাদের কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা চাই দেশের প্রত্যেক রোগী বেডে থেকে সসম্মানে চিকিৎসা নেবেন। এটিই প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার, নির্দেশনা, ইচ্ছে ও আশা। তাই আমরা চেষ্টা করছি তা বাস্তবায়নের। শেবাচিম হাসপাতালের পুরোনো ভবনের মেঝে ও দেওয়াল ঠিক নেই। ৫৫-৬০ বছর হয়ে গেছে ভবনের বয়স, ফলে এখানে অবকাঠামোর খুবই অবনতি হয়েছে। আমি মনে করি এখানে নতুন অবকাঠামো হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনার ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, সবাই টিকা পেয়েছেন। মানুষ ভালো আছে, এজন্য চিকিৎসা নিতে পারছে তারা। কারো মনে ভয় নেই, সবাই হাসপাতালে আসতে পারছে। দেখলাম হাসপাতালে কেউ মাস্ক পরে না। এর অর্থ সবাই করোনার টিকা নিয়েছে। সবার মনের ভেতর সাহস রয়েছে। এখানে যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোসহ যা যা প্রয়োজন, তা দেওয়া হবে। এসব হাসপাতালের বাইরে এখানকার জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে আমাদের যারা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে বৈঠক করব, তাদের কথা শুনব এবং যথাযথ নির্দেশনা দেব।
মন্ত্রী বলেন, এর আগে শহীদ সুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতালে গিয়েছিলাম, আধুনিক এ হাসপাতালটির চারতলা খুবই ভবন সুন্দরভাবে তৈরি হয়েছে। হাসপাতালটি চালুর লক্ষ্যে সব কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়ে আসছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি এই এলাকার শিশু ও মায়েদের জন্য খুলে দেওয়া হবে এবং তারা সেখানে ভালো চিকিৎসা পাবে। হাসপাতালটি চারশ বেডের হলেও এখন থেকে সেখানে এক থেকে দেড়শত রোগী চিকিৎসা নিতে পারবে। সেখানে আইসিইউ, সিসিইউ ও অপারেশন থিয়েটার থাকবে, স্ক্যানো ইউনিট স্থাপন করব।
তিনি বলেন, ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের চিকিৎসায় হাসপাতালের জন্য নতুন অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। এই ধরনের হাসপাতাল আট বিভাগে আটটি হচ্ছে। ফলে আট বিভাগে প্রায় চার হাজার বেড হবে। এর মাধ্যমে দেশের লোক উন্নত চিকিৎসা পাবে এবং বিদেশে যাওয়া লাগবে না। এটি শুরু হলে ক্যানসারের রোগীরা এখানে চিকিৎসায় নিতে পারবে। ঢাকায় যাওয়া লাগবে না। আর যারা কিডনি ও হৃদরোগের সমস্যায় ভোগে, তারাও সেবা নিতে পারে। এসব অসুখ দেশে অনেক বেড়েছে, যার মাধ্যমে প্রায় ৭০ শতাংশ লোকের মৃত্যু হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে কিডনি, হৃদরোগ ও ক্যান্সার রোগ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সচেতন হতে হবে যাতে এসব রোগ না হয়। আগে থেকে সচেতন হলে রোগগুলোও কম হবে। আর হয়ে গেলে চিকিৎসা নিতে হবে। সেদিকে খেয়াল রাখছে সরকার। তাই দেশের নির্মাণাধীন হাসপাতালগুলো চালু হলে ঢাকার ওপর আর চাপ পড়বে না। আর এসব জায়গাতেই বড় ফ্যাসিলিটিও থাকবে।
হাসপাতালের কর্মীদের উদ্দেশে মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আপনারা নিজেরা উপস্থিত থাকবেন, যন্ত্রপাতি সচল রাখবেন, হাসপাতাল পরিষ্কার রাখবেন। যারা সেবা নিতে আসবে তাদের উন্নত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
পরিদর্শনকালে মন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিভিন্ন হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন