অবশেষে নগরভবন ছাড়ছেন বিসিসি’র সেই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ৯:১৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪

অবশেষে নগরভবন ছাড়ছেন বিসিসি’র সেই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আলোচিত-সমালোচিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। গতকাল সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উপসচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তাকে জেলা ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।নগর ভবনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ম্যাজিষ্ট্রেট থেকে সচিব, সচিব থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরবর্তীতে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মোঃ ইসরাইল হোসেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব পালন করেছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালে শওকত হোসেন হিরন মেয়র থাকাকালীন সময় সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে ইসরাইল হোসেন যোগদান করেন।মাঝখানে কয়েক বছর অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও আবার ঘুরে ফিরে চলে আসেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে।২০১৮ সালে তিনি (ইসরাইল) বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সচিব হিসেবে যোগদান করেন। একই বছরের ৯ আগস্ট থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়কালে তৎকালীন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সাথে অতিরিক্ত হোল্ডিংকর আরোপসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ তৈরি হলে তিনি নিজস্ব তদ্বিরে অন্যত্র বদলী হন। পরবর্তীতে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি পুনরায় বদলী হয়ে বরিশাল এসে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি থেকে জেলা প্রশাসকের নিয়োগের আদেশের আগ পর্যন্ত বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ইসরাইল হোসেন দায়িত্ব পালন করেন। কর্পোরেশনে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের মধ্যে প্রধান অভিযোগ হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে রুঢ় আচরণ। লঘু অপরাধে কর্মচারিদের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখার হুমকি, সদর রোডে বেধেঁ পেটানোর হুমকিসহ অশোভনীয় আচরণ করা ছিলো ইসরাইল হোসেনের নিত্যনৈমেত্তিক ব্যাপার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারি জানান, প্রতিদিন অফিসে গিয়ে তিনি কারণে-অকারণে মেজাজ দেখাতেন। তিনি দম্ভোক্তি সাথে বলতেন তার মেজাজ অনেক কড়া। এছাড়া তিনি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নিয়ম আরোপ করে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের একটা ভীতিকর পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করতেন। তার আরোপিত নতুন নতুন বিধি নিষেধে গ্রাহক হয়রানিও কম হতোনা। কর্মচারিরা জানান, তিনি নিজেকে সবসময় একজন সৎ কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও নানাবিধ অনিয়মে জড়িত ছিলেন। সেমিনার অথবা সভায় অতিথি হিসেবে না গিয়েও তিনি উপস্থিতি সিটে স্বাক্ষর করে সম্মানি গ্রহন করতেন। সাধারণ কেবিনে গিয়েও তিনি ভিআইপি কেবিনের বিল করে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহন করতেন। সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সময়ে তিনি ছিলেন বেশী বেপরোয়া। নগরভবনে তিনি বলে বেড়াতেন মেয়র আর তার বাইরে অফিসে আর কোন উর্ধ্বতন নেই। নিজস্ব গাড়ী ক্রয় করতে সাদিক আবদুল্লাহর কাছ থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা উপহার হিসেবে গ্রহন করেছিলেণ ইসরাইল হোসেন। ওই সময়ে তিনি নিজেকে জাহির করতে গিয়ে নগরবাসীর উপর করের বোঝা চাপিয়ে দেন। এনিয়ে নগরজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হলে সাদিক আবদুল্লাহর সাথে তার দূরত্ব তৈরি হয়। পরে তিনি বরিশাল থেকে বদলী হতে বাধ্য হন। সূত্রমতে, স্ত্রী বরিশালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত থাকায় ইসরাইল হোসেনও বরিশালে নানাপন্থায় বারংবার কর্মরত থেকেছেন। সর্বশেষ জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় তার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে দীর্ঘবছর কর্মরত থাকার অধ্যায়ের যবানিকাপাত হলো। আর তার বদলীর খবরে নগর ভবনের বেশীরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারি স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন