বাউফলে মৃত নারীকে জীবিত দেখিয়ে দলিল নিবন্ধন

প্রকাশিত: ৯:০১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০

বাউফলে মৃত নারীকে জীবিত দেখিয়ে দলিল নিবন্ধন

মারা যাওয়ার ২৪ দিন পর এক নারীকে জীবিত ও সশরীরে সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে উপস্থিত দেখিয়ে হলফনামা করানোর পরে জমির দলিল নিবন্ধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে। ওই দলিলের নিবন্ধন বাতিল চেয়ে পটুয়াখালী আদালতে মামলা করেছেন মৃত নারীর ওয়ারিশ ও চাচাতো ভাই মামুন হোসেন।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাউফলের মদনপুরা ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেনের স্ত্রী রেহেনা বেগম ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর মারা যান। অথচ রেহেনা বেগম ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর বাউফল সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিল দিয়েছেন বলে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি দাবি করছেন। উল্লেখ্য, রেহেনা বেগমের স্বামী ২০১১ সালে মারা যান এবং ওই দম্পতির কোনো সন্তান নেই।ওয়ারিশ সনদ অনুযায়ী তিন চাচাতো ভাই জীবিত আছেন। এরা হলেন- ফজলুল হক সিকদারের তিন ছেলে আবুল হোসেন, একেএম শফিউল আলম ও মামুন হোসেন।বাউফল উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মোসা. রেহেনা বেগম নামের ওই নারী ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর একই উপজেলার ভরিপাশা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে দুটি অছিয়াতনামা দলিলে ৭৪ শতাংশ জমি নিবন্ধন করে দেন। এর মধ্যে ওই তারিখের ৬৯/২০১৯ নম্বরে দলিলে চন্দ্রপাড়া মৌজার ৫০ শতাংশ জমি ও ৭০/২০১৯ নম্বর দলিলে ভরিপাশার ২৪ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।সাইফুলের বাবার নাম আলমগীর হোসেন। তিনি ওই নারীর কোনো ওয়ারিশ না। জমির দলিল নিবন্ধনের নিয়মানুযায়ী দলিল দাতাকে সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে সশরীরে উপস্থিত থেকে হলফনামা দেয়ার পরে দলিল নিবন্ধন হয়। এমনকি দলিলেও ছবিযুক্ত স্বাক্ষর থাকতে হয়।মদনপুরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম বলেন, ‘রেহেনা বেগম ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর মারা গেছেন যা এলাকার সবাই জানে। সে অনুযায়ী তার স্বজনদের মৃত্যু সনদ দেয়া হয়েছে। মারা যাওয়ার ২৪ দিন পর কিভাবে তিনি দলিল দিলেন তা আমার বোধগম্য নয়।মৃতের ওয়ারিশ চাচাতো মামুন হোসেন বলেন, ‘তিনি মারা যাওয়ার আগে আমরাই দেখভাল করতাম। তার জমি আমারই ভোগ দখল করতাম। সম্প্রতি জানতে পারি ওই জমি তিনি সাইফুল নামে অন্য এক ব্যক্তিকে অছিয়াতনামা দলিল দিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি মারা যাওয়ার ২৪ দিন পর দলিল দিয়েছেন। সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে ওই দলিলের সইমোহর (নকলকপি) উঠিয়ে দলিল বাতিল চেয়ে চলতি বছরের ২০ আগস্ট পটুয়াখালীর বাউফল সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছি।তবে এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রেহেনা বেগম জীবিত থাকাকালীন তাকে অছিয়াতনামা দলিল দিয়েছেন। তিনি ৩ নভেম্বর মারা যাননি। মারা গেছেন ৫ ডিসেম্বর।’ এ সংক্রান্ত কাগজ তার কাছে আছে বলেও দাবি করেন।বাউফলের সাব-রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে দলিল নিবন্ধনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। জমি দাতাকে অবশ্যই সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে উপস্থিত হতে হবে। তাই কোনোভাবেই মৃত্যু ব্যক্তির নামে দলিল নিবন্ধন করা যাবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন