বিদেশে অর্থপাচারকারীদের তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২০

বিদেশে অর্থপাচারকারীদের তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট

বিদেশে অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িতদের যাবতীয় তথ্য অর্থাৎ দেশের বাইরে অর্থপাচারে সম্পৃক্তদের নাম, ঠিকানা, অর্থের পরিমাণ এবং পাচারের অর্থে বাড়ি তৈরির তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিনানসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

একই সঙ্গে অর্থ পাচারে সম্পৃক্ত ‘দুর্বৃত্ত ও এজেন্টদের’ দেশ থেকে অর্থপাচার থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত ঘটনায় রুলও জারি করেছেন আদালত। রুলে অর্থপাচারকারী সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, ব্যাংকারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর (কজলিস্ট) কার্যতালিকায় থাকবে বলে জানিয়েছেন আদালত।

সরকারি কর্মচারীদের অর্থপাচার নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য গণমাধ্যমে আসে। গণমাধ্যমে আসা এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে রোববার (২২ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

আদালতে এদিন দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

শুনানিতে আদালত বলেছেন, ‘যারা অর্থপাচার করছে, তারা দেশ ও জাতির শত্রু।’ তারা দেশ ও জাতির সঙ্গে বেঈমানি করছে বলেও মনে করেন আদালত। আদালত বলেন, ‘ওই ব্যক্তিরা কীভাবে অর্থপাচার করল, কীভাবে ওই টাকায় বাইরে বাড়ি তৈরি করল, তা অবশ্যই জানা দরকার। তা না হলে এই অপরাধ কমবে না।’

আদালত আরও বলেন, ‘দেশে থাকবে, দেশে পড়াশোনা করবে, অথচ দেশকে ঠকিয়ে দেশের টাকা বাইরে নিয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। একজন মানুষের দেশপ্রেম থাকলে এটি কখনোই হতে পারে না।’

গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা নয়, বিদেশে বেশি অর্থপাচার করেন সরকারি কর্মচারীরা। আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলে-মেয়েরা সেখানে থাকে। আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন। এছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি।’

এরপর দেশের বেশকিছু জাতীয় দৈনিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সেসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অর্থপাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য চেয়ে স্ব-প্রণোদিত হয়ে আদেশ দিলেন হাইকোর্ট।

সংবাদটি শেয়ার করুন