ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে এমপির পক্ষে মিছিল!

প্রকাশিত: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২২

ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে এমপির পক্ষে মিছিল!

পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ৩২৩টি প্রকল্পের বরাদ্দের দুই কোটিরও বেশি টাকা লোপাট! বাংলানিউজে এমন সংবাদ প্রকাশের পর এমপির পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করেন কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা ছাত্রলীগের নেতারা।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সৈয়দ ফজলুল হক কলেজে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনের পক্ষে মিছিলে নামতে বাধ্য করিয়েছেন এমন অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনের গ্রামীণ অবকাঠামো মেরামত প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও লুটপাট নিয়ে গতকাল ১৭ এপ্রিল রোববার ‘এমপির বরাদ্দের দুই কোটিরও বেশি টাকা লোপাট!’ শিরোনামে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমসহ একটি সম্প্রচার গণমাধ্যম ও পত্রিকায় প্রকাশিত ওই খবরের বিপরীতে সোমবার বেলা ১১টার দিকে সৈয়দ ফজলুল হক কলেজ ও লেমুয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমপি রিমনের পক্ষে মিছিল করে কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা ছাত্রলীগ। এসময় কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৈয়দ ফজলুল হক কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন তকদির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসানুর রহমান জনি, রবিউল ইসলাম রানা, কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদি তানিনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন ছাত্রলীগ নেতা লেমুয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সৈয়দ ফজলুল হক কলেজের শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে ক্লাস থেকে বের করেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের লেমুয়া কাকচিড়া-লেমুয়া সড়কে লেমুয়া বাজারে জড়ো করে এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনের পক্ষে মিছিল করায়। এসময় ওই শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিছিলটি লেমুয়া বাজার প্রদক্ষিণ করে।

লেমুয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাত্রলীগ নেতারা বাধ্য করে ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় তাদের রাস্তায় নেমে মিছিল করতে বাধ্য করেছে।

লেমুয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম পলাশ বলেন, আমি ওই সময় স্কুলের কাজে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলাম। সমীর স্যার দায়িত্বে ছিলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে সমীর স্যারের সঙ্গে কথা বলে আপনাকে জানাবো।

যোগাযোগ করা হলে সহকারী প্রধান শিক্ষক সমীর চন্দ্র খরাতি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রথমে কল রিসিভ করেনি। পরে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন তকদির বলেন, ছাত্রদের জোর করে আমরা মিছিলে অংশগ্রহণ করাইনি। আপনারা এখানে এসে জানতে পারেন। এ বিষয়ে আমি ফোনে কিছু বলতে চাইনা। যদি কিছু জানার থাকে সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

সৈয়দ ফজলুল হক কলেজের অধ্যক্ষ জিয়াউল করিম বলেন, আমি কলেজের কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি। কলেজে খোঁজ নিয়ে জেনে দেখবো বিষয়টি।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ বলেন, স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরিধান করা অবস্থায় রাজনৈতিক কোনো মিছিলে ব্যবহার করার বিষয়টি জেনে দেখব। যদি এমন করা হয়ে থাকে তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক বলেন, থানা ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিলের বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে বিষয় সাংগঠনিকভাবে আমরা কিছুই জানিনা। কাকচিরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি দেখে আপনাকে জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন বলেন, বিক্ষোভ মিছিলের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। বাংলানিউজ

সংবাদটি শেয়ার করুন