ডুবতে থাকা নারী-শিশুসহ ১২ জনকে উদ্ধার করল ৩ পুলিশ সদস্য

প্রকাশিত: ৭:২৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২১

ডুবতে থাকা নারী-শিশুসহ ১২ জনকে উদ্ধার করল ৩ পুলিশ সদস্য

ডুবতে থাকা নারী-শিশুসহ ১২ জনকে উদ্ধার করল ৩ পুলিশ সদস্য

বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই পশুরিকাঠি খেয়াঘাট থেকে কাঠের তৈরি ছোট ট্রলারে করে কীর্তনখোলা নদী পাড়ি দিচ্ছিলেন ১২ জন যাত্রী। মাঝনদীতে প্রবল স্রোতের কবলে পড়লে নৌযানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পানিতে ডুবে যায়। ট্রলারে যাত্রীদের মধ্যে চার শিশু ও দুইজন নারীও ছিলেন। ডুবতে থাকা যাত্রীদের চিৎকারে এগিয়ে যান বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) তিন সদস্য। স্পিডবোট ও দুটি ট্রলার নিয়ে একে একে ১২ যাত্রীকে উদ্ধার করেন তারা।

রোববার (৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বিএমপির কাউনিয়া থানার এএসআই বদরুল ইসলামের নেতৃত্বে উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেন কনস্টেবল মো. ইয়াসিন ও মো. রুদ্র।

ট্রলারের কয়েকজন যাত্রী বলেন, চরমোনাই পশুরিকাঠি খেয়াঘাট থেকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তারা ট্রলারে ওঠেন। কিছুক্ষণ পর কীর্তনখোলা নদীর বেলতলা খেয়াঘাটের উদ্দেশ্যে ট্রলারটি ছেড়ে যায়। ছোট ট্রলারটিতে ১২ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ছিল চার শিশু। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী থাকায় ট্রলারটি ঢেউয়ে দুলছিল। মাঝনদী গেলে প্রবল স্রোতের তোড়ে ট্রলারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পানিতে ডুবে যায়। যাত্রীদের কয়েকজন জানতেন না সাঁতার। সাঁতার জানতো না শিশুগুলোও। ফলে শিশুদের রক্ষা করতে গিয়ে তাদের বাবা-মা হাবুডুবু খাচ্ছিলেন।

তারা বলেন, ‘তাদের বাঁচাতে অন্যরা এগিয়ে গেলে তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ে তারাও পানিতে তলিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সে সময় স্পিডবোট ও দুইটি ট্রলার নিয়ে এগিয়ে আসেন এএসআই বদরুল ইসলাম, কনস্টেবল মো. ইয়াসিন ও মো. রুদ্র। তারা একে একে উদ্ধার করেন ডুবতে থাকা ১২ জন যাত্রীকে। ওই তিন পুলিশ সদস্যর কারনেই ট্রলারের সব যাত্রীরা বেঁচে ফিরেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই আমাদের। তারা আমাদের নতুন জীবন দিয়েছেন।’
উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দেয়া এএসআই বদরুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে বেলতলা খেয়াঘাট এলাকায় ডিউটি ছিল। আমার সঙ্গে পুলিশ লাইনের দুইজন কনস্টেবল ছিলেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মাঝনদীতে ট্রলারটি ডুবতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে খেয়াঘাটে থাকা স্পিডবোট ও দুইটি ট্রলার নিয়ে তাদের উদ্ধারে এগিয়ে যাই। দুই কনস্টেবল, স্পিডবোট ও ট্রলার চালক এবং স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় ডুবতে থাকা সব যাত্রীকে উদ্ধারে সক্ষম হই। তীরে নিয়ে আসার পর যাত্রীদের অনেকেই আমাদের জাপটে ধরে কেঁদে ফেলেন। ধন্যবাদ জানান।’

এএসআই বদরুল আরও বলেন, ‘ঘটনাটি জানাজানি হলে থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সহকর্মীরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সহকর্মীরা যেভাবে আমার কাজের প্রশংসা করছেন, তাতে সত্যিই আপ্লুত আমি।’

এ প্রসঙ্গে কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. লোকমান হোসেন বলেন, ‘জনগণকে নিরাপত্তা দেবে, নিরাপদে রাখবে, বিপদে এগিয়ে যাবে এটাই তো পুলিশের দায়িত্ব। দায়িত্বের সেই জায়গা থেকেই ডুবতে থাকা যাত্রীদের বাঁচাতে তাৎক্ষণিক ছুটে যান এএসআই বদরুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন দুই কনস্টেবল। সামান্য দেরি করলে হয়ত খারাপ কিছু ঘটতে পারত। এএসআই বদরুল ইসলাম প্রশংসা পাওয়ার মতো কাজ করেছেন। তার কারণে আজ কাউনিয়া থানার পুলিশ সদস্যরা গর্বিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. মনজুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) রুনা লায়লা, কাউনিয়া থানার সহকারী কমিশনার মো ইব্রাহিম, ওসি আজিমুল করিম, পরিদর্শক (তদন্ত) ছগির হোসেনসহ থনার সব সদস্য এএসআই বদরুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’

সংবাদটি শেয়ার করুন