ঢাকা ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:২৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০২২
উজিরপুর (বরিশাল) সংবাদদাতাঃ
বরিশালের উজিরপুরের শিকারপুর বন্দর বাজারে পাহারাদারসহ অর্ধশতাধিক মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। এ সময় ২০ থেকে ২৫ জনের ডাকাত দলটি বাজারের ৩টি স্বর্ণের দোকানসহ কমপক্ষে ৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে নগদ টাকা এবং বিপুল পরিমাণ মালামাল লুট করে নেয়। ডাকাত সদস্যদের অনেকেই পুলিশের পোশাক পরিহিত ছিলো।
শনিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে প্রায় ঘন্টাব্যাপী ডাকাতি শেষে বন্দর সংলগ্ন সন্ধ্যা নদী দিয়ে স্পীডবোটযোগে পালিয়ে যায় ডাকাত দলের সদস্যরা। এ ঘটনার পরের দিন সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বরিশাল রেঞ্জের উপ পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস.এম. আক্তারুজ্জামান।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, ডাকাতি চলাকালীন সময়ে একাধিকবার থানা পুলিশকে ফোন করা হলেও থানা পুলিশের সদস্যরা সময়ক্ষেপণ করে ডাকাত দল চলে যাওয়ার দীর্ঘ সময় পরে ঘটনাস্থলে আসে।
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সূত্রে জান গেছে, শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ২০ থেকে ২৫ জনের সশস্ত্র একটি ডাকাত দল বাজারে প্রবেশ করে ৯ জন পাহারাদার, বন্দরে চলাচলরত ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও পথচারীসহ অর্ধশতাধিক মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রলারঘাট সংলগ্ন একটি মুদি দোকানের মধ্যে আটকে রাখে। পরে ডাকাত দলের অন্য সদস্যরা বাজারের রিয়া, কনিকা ও আহাম্মেদ জুয়েলার্স, আল মদিনা ফার্মেসি ও বেসরকারি ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট কার্যালয়ের তালা কেটে লুটপাট চালায়।
শিকারপুর বন্দরের আল মদিনা ফার্মেসির মালিক বাবুল হোসেন জানান, ডাকাতরা চারটি তালা কেটে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে নগদ দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়েছে। তবে কোনো মালামাল নেয়নি।
পাহারাদারদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, রাত ৩টার কিছু সময় পরে ১৫ থেকে ২০ জনের ওই ডাকাত দলটি স্পীডবোর্ড যোগে এসেছিলো। ডাকাত সদস্যদের অনেকে পুলিশের পোশাকে ছিলো। আর প্রত্যেকে হেলমেট, মাস্ক ও মুখোশ পরে নিজেদের মুখ ঢেকে রেখেছিলো।
আহাম্মেদ জুয়েলার্সের মো. জনি জানান, তার দোকানের তালা কেটে নগদ ৪০ হাজার টাকা ও ৮০ ভরি রুপা নিয়ে যায়। ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাংকি শাখা অফিসের নৈশ প্রহরীকে বেঁধে ৬৬ হাজার টাকা লুটে নেয় সংঘবদ্ধ ডাকাতরা।
কনিকা জুয়েলার্স এর মালিক জামাল হোসেন সরদার জানান তার দোকানের তালা কেটে দেড় ভড়ি স্বর্ণ ও নগদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা লুটে নেয় ডাকাতরা। রিয়া জুয়েলার্সের মালিক সিরাজুল ইসলাম জানান, তার দোকান থেকে প্রায় ১৫ ভরি রুপা নিয়ে যায়। ব্যাংক এশিয়া শিকারপুর এজেন্ট মালিক এম.ডি জহিরুল ইসলাম জানান মূল ফটকের তালা কেটে ভিতরে প্রবেশ করে তছনছ করে প্রায় ৬৬ হাজার টাকা লুটে নেয়। এছাড়া আরও কয়েকটি দোকানে ডাকাতরা প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে বন্দর সংলগ্ন স্পিডবোটযোগে চলে যায়।
বাজারের একাধিক নৈশ প্রহরী বলেন, ডাকাতরা একাধিক স্পিডবোট নিয়ে নদীর ঘাটে এসে কমান্ডো ষ্টাইলে বন্দরে ঢুকে ডাকাতি শুরু করে। এ সময় আমরাসহ প্রায় ৩০ জন পথচারী ও লঞ্চ যাত্রীকে অস্ত্রের মুখে আটকে রাখে। সেই সাথে সকলের মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে ও সাথে থাকা টাকা পয়সাও লুট করে।
শিকারপুর বন্দরের ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, শিকারপুর বন্দরের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিলো। কিছুদিন আগে শিকারপুর পুলিশ ক্যাম্পটি উঠিয়ে নিয়ে যায় জেলা পুলিশ। তাছাড়া থানা থেকে ডাকাতিস্থলে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু ডাকাতি চলাকালীন সময়ে থানার ইনচার্জকে মোবাইলে একাধিকবার খবর দিলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেননি। ডাকাতরা চলে যাওয়ারও দীর্ঘ সময় পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে।
শিকারপুর বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হেমায়েত মুন্সি ও সাধারণ সম্পাদক সফিকুল আলম করিম খান বলেন, ফিল্মি স্টাইলে অর্ধশতাধিক মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি আটকে রেখে কমপক্ষে ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করে নগদ টাকা ও মালামাল লুট করায় ব্যবসায়ীদের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ডাকাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কামরুল হাসান জানান, কয়েকটি দোকানে চুরি সংঘটিত হয়েছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া রবিবার সকালে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
প্রকাশকঃ ডাক্তার জি.কে চক্রবর্তী।
সম্পাদকঃ কাজী মফিজুল ইসলাম।
প্রধান সম্পাদকঃ নুসরাত রসিদ।
নির্বাহী সম্পাদকঃ জাকিরুল মোমিন।
মোবাইলঃ 01711225620
মেইলঃ protidin.barisal@gmail.com
ঠিকানাঃ প্যারারা রোড, বরিশাল ৮২০০।
Design and developed by Engieer BD Network